নাইটভিশনে বিপ্লব: আল্ট্রাথিন ফিল্মে বদলে যাচ্ছে ভারী গগলস প্রযুক্তি
সমাজকাল
প্রকাশ: ১৪:৫৯, ১০ জুলাই ২০২৫

রাতের অন্ধকারে অতিসহজে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিচ্ছে নতুন এক প্রযুক্তি। আগের ভারী গগলস প্রযুক্তির জায়গায় আসছে আল্ট্রাথিন ফিল্মের নাইটভিশন চশমা।
প্রযুক্তি ডেস্ক
নতুন এক প্রযুক্তি রাতের অন্ধকারে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিচ্ছে – আর সেটিও আবার অতিসহজে। দীর্ঘদিন ধরে সৈন্য ও উদ্ধারকর্মীরা যে ভারী নাইটভিশন গগলস ব্যবহার করে আসছিলেন, সেটি এবার বদলে যেতে পারে একটি পাতলা ও হালকা ফিল্ম দিয়ে তৈরি সেন্সরের কারণে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT)–এর উপাদান প্রকৌশলী চিনইউয়ান ঝাং এবং তার আন্তর্জাতিক গবেষকদল এই নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন, যাতে ব্যবহৃত হয়েছে ‘পাইরোইলেকট্রিক লিড ম্যাগনেশিয়াম নিওবেট-লিড টাইটানেট’ বা সংক্ষেপে PMN-PT নামক একধরনের স্ফটিক।
হিমায়ন ছাড়াই ঠান্ডার মতো কার্যকারিতা
বর্তমান নাইটভিশন গগলস সাধারণত HgCdTe সেন্সর ব্যবহার করে যা ঠান্ডা রাখতে তরল নাইট্রোজেন দরকার হয়। এই ঠান্ডা করার জন্য আলাদা যন্ত্র প্রয়োজন হয়, যার ওজন বেশ কয়েক পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু নতুন এই ১০ ন্যানোমিটার পাতলা ফিল্ম সেই ঝামেলাকেই একদম বাতিল করে দিচ্ছে।
ঝাং-এর দলের এই পাতলা ফিল্ম রুম টেম্পারেচারেই কাজ করে, এবং ঠান্ডা করা সেন্সরের মতোই সম্পূর্ণ ফার ইনফ্রারেড স্পেকট্রাম কভার করতে পারে। এটি ১০০ গুণ বেশি তাপমাত্রা সংবেদনশীলতা দেখিয়েছে, যা বেশ চমকপ্রদ।
প্রযুক্তির পেছনের কৌশল
এই আল্ট্রাথিন ফিল্ম তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা “অ্যাটমিক লিফট-অফ” নামক একটি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। এতে স্ফটিককে উৎস সাবস্ট্রেট থেকে আলাদা করতে কোনো রাসায়নিক এচিং বা গ্রাফিনের মতো ব্যয়বহুল স্তর দরকার পড়েনি। শুধু হালকা চাপেই ফিল্মটি সাবস্ট্রেট থেকে নিখুঁতভাবে উঠে আসে।
এই কৌশল অন্যান্য মেমব্রেন প্রযুক্তির তুলনায় অনেক দ্রুত এবং খরচ কমিয়ে দেয়। এর ফলে বড় আকারে এবং উচ্চ-পিক্সেল সেন্সর তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।
নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত
এমন হালকা ও শক্তিশালী সেন্সর নাইটভিশন প্রযুক্তিকে সামরিক ব্যবহার ছাড়িয়ে সাধারণ নাগরিক জীবনের নানা ক্ষেত্রে নিয়ে যেতে পারে। যেমন:
দমকল কর্মীদের জন্য ধোঁয়ার ভেতর দেখতে সহায়তা,
বিদ্যুৎকর্মীদের লাইভ তার পরীক্ষা,
বন্যপ্রাণী গবেষকদের রাতের সময় প্রাণী গণনা,
স্বয়ংচালিত গাড়িতে ইনফ্রারেড ক্যামেরা যুক্ত করে রাতের বেলা পথচারী শনাক্তকরণ,
এমনকি স্মার্টওয়াচে ত্বকের তাপমাত্রা মাপার সুবিধাও।
চ্যালেঞ্জ এখনো আছে
যদিও ৮০ ন্যানোমিটার পুরু ফিল্মগুলো সহজেই ব্যবহারযোগ্য ছিল, ১০ ন্যানোমিটার ফিল্মের মাত্র ২০ শতাংশ এখনো পর্যন্ত সফলভাবে হ্যান্ডলিং ও ইনস্টলেশন টেস্টে টিকে আছে। তবে গবেষকরা বর্তমানে প্রটেকটিভ কোটিং এবং স্বয়ংক্রিয় মেশিন প্রসেসিং-এর মাধ্যমে এই সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজছেন।
ভবিষ্যতের চোখে
ঝাং-এর ভাষায়, "নাইটভিশন কন্টাক্ট লেন্স হয়তো এখনও সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা এমন প্রযুক্তি তৈরি করছি যা দেখতে সাধারণ চশমার মতো হবে, কিন্তু কাজ করবে যুদ্ধক্ষেত্রের শক্তিশালী নাইটভিশন গিয়ারের মতো।"
গবেষকেরা আরও কম বিষাক্ত উপাদান দিয়ে এই প্রযুক্তি পুনরায় তৈরি করার জন্য পরীক্ষা করছেন, যাতে পরিবেশগত প্রভাব কম হয়।
এই যুগান্তকারী গবেষণাটি সম্প্রতি Nature সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।