সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা-আফঈদারা
সমাজকাল
প্রকাশ: ১৪:২৯, ৭ জুলাই ২০২৫

সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা-আফঈদারা। মিয়ানমারে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ইতিহাস গড়ে রোববার গভীর রাতে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল।
নিজস্ব প্রতিবেদক
মিয়ানমারে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ইতিহাস গড়ে রোববার গভীর রাতে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। মধ্যরাতেই বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হাতিরঝিলের অ্যাম্পিথিয়েটারে পৌঁছে পেয়েছেন অভিনব সংবর্ধনা। জমকালো সেই আয়োজনে দলের সদস্যরা কেবল অতীত সাফল্যের আনন্দ ভাগাভাগি করেননি, তারা উচ্চারণ করেছেন নতুন স্বপ্ন—বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর প্রতিশ্রুতি।
স্মরণকালের অন্যতম সেরা এই ক্রীড়াভিনয় রাতে এম্পিথিয়েটার মঞ্চে উঠতেই ঝলসে ওঠে আলো, শুরু হয় ব্যান্ড সঙ্গীতের তালে নজরুলের ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ গান, আর ঢাউস বোর্ডে ঝলসে ওঠে—‘QUALIFIED’ লেখা শব্দটি।
বিশ্বমঞ্চে যাওয়ার সংকল্প
মিয়ানমার ম্যাচে জোড়া গোল করে দলকে এগিয়ে নেওয়া ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন,“এই জয় কোনো ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, এটি দলীয় প্রচেষ্টার ফল। আমরা বাংলাদেশের মেয়েরা জানি, কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করতে হয়। এশিয়ার সেরা ছয় দলের মধ্যে থেকে বিশ্বকাপে খেলাই এখন আমাদের লক্ষ্য। আমরা বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নাম তুলে ধরতে চাই।”
দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার প্রান্তিও একই স্বপ্নের কথা বলেন,“এই মুহূর্ত ভুলবার নয়। কেবল দক্ষিণ এশিয়া নয়, আমরা চাই বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে। এই আয়োজনে যারা যুক্ত ছিলেন, বিশেষ করে কিরণ ম্যাডামকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়।”
কোচের অভিব্যক্তি
দলের প্রধান কোচ পিটার বাটলার বলেন,“এই জয় সহজ ছিল না। আমরা কঠিন সময় পার করেছি। কিন্তু খেলোয়াড়দের মনোবল আর দলের সংহতি ছিল অসাধারণ। এই মেয়েরা যা করেছে, তা বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে। সমর্থকদের উপস্থিতি প্রমাণ করে, এই দেশ ফুটবল ভালোবাসে।”
বাফুফে সভাপতির বক্তব্য
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেন,“আপনারা শুধু মাঠে ইতিহাস লেখেননি, আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেওয়ার যাত্রাতেও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। ১৮ কোটি মানুষের সমর্থন আপনাদের সঙ্গে আছে। এখন একটাই লক্ষ্য—মিশন অস্ট্রেলিয়া।”
তারকা ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্বদের অভিব্যক্তি
প্রখ্যাত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন,“ঋতুপর্ণা আমার কাছে এখন শুধু ফেভারিট অ্যাথলেট না, বরং ফেভারিট স্পোর্টস পারসোনালিটি। আপনি এবং আপনারা যেভাবে লড়াই করেছেন, তা বাংলাদেশি নারীশক্তির এক অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছে।”
সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক বলেন,“এই সাফল্য প্রমাণ করে, বাংলাদেশের মানুষ ফুটবলকে কতটা ভালোবাসে। মেয়েরা বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকের মঞ্চেও বাংলাদেশকে তুলে ধরবে—এই প্রত্যাশা করি।”
মধ্যরাতের রঙিন সমাপ্তি
রাত ৩টার কিছু পর আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে ফুটবলারদের বরণ করা হয় ফুল দিয়ে। ছিল কনফেত্তির ঝলক, রক মিউজিকের গর্জন, জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়ার আবেগঘন মুহূর্ত। সবশেষে তোলা হয় একটি বড় দলীয় গ্রুপ ছবি। চারপাশ তখনো মুখর করতালি ও স্লোগানে।