ফেসবুকে পোস্ট
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ জানালো এনসিপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৫৭, ১৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:১৫, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট জুলাই জাতীয় সনদের স্বাক্ষর করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ ছয়টি দল স্বাক্ষর করেনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাদের নিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি সনদে স্বাক্ষর না করায় বেশ আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া হয়। এমনকি দলটি ঘোষণা দিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করে।
এরপর শুক্রবার রাতে দলের ফেসবুক পেজে সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ জানায় এনসিপি। একইভাবে ফেসবুকে পৃথক এক পোস্টে সনদ স্বাক্ষর না করার কারণ জানান দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) মধ্যরাতে জুলাই জাতীয় সনদে সই না করার কথা জানায় এনসিপি।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত ছিলেন এবং সনদে স্বাক্ষর করেন। পরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও স্বাক্ষর করেন
'এনসিপি কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি?’
এনসিপির ফেইসবুক পেইজে দলের ‘নীতি ও গবেষণা শাখা’ ‘এনসিপি কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি?’- শীর্ষক এক পোস্টে সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ জানায়।
পোস্টে বলা হয়, “এনসিপি বলেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের টেক্সট বা খসড়া এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দেখার পর সনদে সই করবে। কারণ, এনসিপি জুলাই সনদকে স্রেফ রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল কিংবা ফাঁকা প্রতিশ্রুতি মনে করে না।”
“এনসিপি মনে করে জুলাই সনদের প্রধানতম কাজ হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তি নির্মূল এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তর। এ কারণে এই সনদের সুস্পষ্ট আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি থাকতে হবে বলে এনসিপি মনে করে।”
“রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ এক বছর ঐকমত্য কমিশনের সাথে কাজ করে জুলাই সনদ এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রশ্নে একমত হয়েছে। জুলাই সনদ আদেশ>গণভোট> সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনে সক্ষম গাঠনিক ক্ষমতা সম্পন্ন আগামী সংসদ (দ্বৈত ভূমিকা)–এই প্রক্রিয়ায় সনদ বাস্তবায়ন হবে এ ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। অথচ সনদের অঙ্গীকারনামায় বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ নাই।”
পোস্টে আরও বলা হয়- “এনসিপি মনে করে বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করা জনগণের সাথে প্রতারণার শামিল। কারণ, অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের করা প্রতিশ্রুতি নিজেরাই ভঙ্গ করেছে।”
এছাড়াও ওই ব্যাখ্যায় আরও তিনটি বিষয় তুলে ধরেছে এনসিপি। এগুলো ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট’ হিসেবে মন্তব্য করে বলা হয়েছে-
১. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া (টেক্সট) এবং গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।
২. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন।
৩. গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদে রায় দেয়, তবে নোট অব ডিসেন্টের কোনো কার্যকরিতা থাকবে না। গণভোটের রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের উপর প্রদত্ত কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার (গাঠনিক ক্ষমতা) বলে সংবিধান সংস্কার করবে। সংস্কার করা সংবিধানের নাম হবে: বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬।
দলটি ফেইসবুক পোস্টে বলেছে, “এসব বিষয়ের নিশ্চয়তা ছাড়া সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত হবে বলে এনসিপি মনে করে না। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লিখিত বিষয়সমূহের স্পষ্ট উল্লেখ নিশ্চিত করেই এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে।”
পোস্টে এনসিপি বলেছে- “অন্য কোনো কোনো দল বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের মূলনীতি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সনদে সই করেনি। তাদের সাথে এনসিপির সই না করার মৌলিক পার্থক্য সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব।”
ফেসবুকে কারণ জানালেন এনসিপি নেতা তুষারও
দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নিজের ফেইসবুকে এক পোস্টে সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ তুলে ধরেন। পোস্টে এই নেতা লেখেন-
”এনসিপি একটা সহজ ও স্পষ্ট দাবি জানিয়েছিল। জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ থাকতে হবে। অর্থাৎ, কীভাবে আপনি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবেন, কীভাবে আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করা হবে– এর উল্লেখ সনদে থাকতে হবে।”
”কারণ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এ ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ> গণভোট> আগামী সংসদের দ্বৈত ক্ষমতা [কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার (গাঠনিক ক্ষমতা) + আইন প্রণয়নী ক্ষমতা] — এই প্রক্রিয়ায় সনদ বাস্তবায়ন হবে। এতে সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। তাহলে এটা সনদে উল্লেখ থাকতে সমস্যা কোথায়?”
”সমস্যা হলো প্রতারণা করার খাসলত। এটা উল্লেখ না রাখতে চাওয়ার কারণ হলো পরবর্তীতে বলা হবে ওই মৌখিক ঐকমত্যের কোনো গুরুত্ব নাই, সাংবিধানিক পথের (যার অর্থ করা হয় পার্লামেন্টের কাছে সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার প্রদান) বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই ইত্যাদি। এই মতলবের কারণেই ঐকমত্যে আসা বিষয়েও সনদে উল্লেখ রাখতে গড়িমসি করা হয়েছে।”
”কমিশন ও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এখন আর সনদ সংশোধনের সুযোগ নাই। অথচ আজ যখন আহতরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে বিক্ষোভ জানাল (মাসিক ভাতা, চিকিৎসা, আইনি সুরক্ষা ও নিরাপত্তা), তখন চাপে পড়ে সাথে সাথে সনদের টেক্সটের ৫ নং ধারা সংশোধন করা হলো। কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ ক্ষমাও চাইলেন।”
”এখন কীভাবে সনদের টেক্সট সংশোধন করা গেল? আর বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখের যৌক্তিক দাবিকে কীভাবে অগ্রাহ্য করা গেল? কার/কাদের নির্দেশে? এগুলোই এখনকার প্রতাপশালী রাজনীতি।”
”কিংস পার্টি, কিংস পার্টি বলে চিৎকার না করে কমিশন ও সরকারের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক কারা চোখ-কান খুলে তা বোঝার চেষ্টা করা দরকার।”
”উদ্ভূত পরিস্থিতির সকল দায় সরকারের। এনসিপির সহনশীলতা ও সহযোগিতার মনোভাবকে দুর্বলতা ভেবে বসবেন না।”