বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

যেমন হবে শিশুর ওজন

সমাজকাল

প্রকাশ: ১৫:৫৩, ২ জুন ২০২৪

যেমন হবে শিশুর ওজন

জীবনধারা ডেস্ক দুই বছরও হয়নি বিয়ে হয়েছে হাবিবা ও ফয়সালের। এরই মাঝে কোল আলো করে এসেছে ছেলে। বয়স ৬-৭ মাস। নতুন বাবা-মায়ের অনুযোগ, ওদের ছেলের ওজন কম। ফয়সালের বাবা -মা রাজধানীর বাইরে থাকেন। ভিডিও কলে নাতীকে দেখে , বার বার ওজন কম হওয়ার অনুযোগ করেন। পাশের বাড়ির বাচ্চার বয়স একই, কিন্তু তার নাকি ওজন বেশি। নতুন নবজাতককে দেখতে যেই বাড়িতে আসে, ওজন কম হওয়ার ইঙ্গিত করে। এসব দেখে ফয়সালও ইদানিং একই পথে হাটা শুরু করেছে, অভিযোগ হাবিবার। তাই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে প্রায়ই মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। স্বাভাবিক ওজন প্রায় প্রত্যেক বাবা-মাকেই শিশুর ওজন নিয়ে এমন উদ্বেগে ভুগতে দেখা যায়। এর কারণ, কারো হয়তো একটু ওজন কম, আবার কারো হয়তো একটু বেশি। একটা প্রবণতা প্রায়ই দেখা যায়, বাচ্চার ওজন বেশি মানেই ভালো। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, বাচ্চা যদি স্বাভাবিক থাকে, তার যদি কোনো রোগ না থাকে, গ্রোথ কার্ভ যদি স্বাভাবিক থাকে অর্থাৎ, তার বেড়ে ওঠা নিজের মতো হয়, তাহলে কোনো চিন্তা নেই। সব পরিবারের জীবনধারণ প্রক্রিয়া এক নয়। একজন চাকরিজীবীর সঙ্গে একজন ব্যবসায়ীর পরিবারের সন্তানের বেড়ে ওঠার মধ্যে ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। নয়তো বাবা-মাকে‘গ্রোথ চার্ট’ বের করে চিকিৎসককে বোঝাতে হয়, আপনাদের বাচ্চা সুস্থ, স্বাভাবিক আছে। সঠিকভাবেই বাড়ছে। অন্যের সঙ্গে তুলনা করার চেয়ে সুস্থ থাকাই ওর জন্য বেশি জরুরি। কে কোনভাবে বেড়ে উঠছে, সেটাই বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার ওজনের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাবা-মা সঠিক নিয়ম পালন করছেন কিনা, সেটা দেখা বেশি জরুরি। দেখা গেছে, অনেক বাচ্চাই জন্মের সময় কম ওজন নিয়ে জন্মায়। পরবর্তী সময়ে তারা যদি বেশি ওজন গেইন করে, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ বংশগত ধারা বা জেনেটিক মেকাপ কখনও বেশি ওজন সাপোর্ট করে না। ওজন কতটা গুরুত্বপূর্ণ? শিশুর ওজনের চেয়ে মস্তিষ্কের বিকাশ হওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ । সাধারণত বাবা-মায়েরা প্রথমে এটা বুঝতে চান না। চিকিৎসকেরই দায়িত্ব তাদের বোঝানো। ওজন বেশির কারণে অনেকসময় বাচ্চা মানসিক অবসাদে ভুগতে পা। বয়ঃসন্ধির সময় কোনো মেয়ের ওজন বেশি হলে সে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হতে পারে। মনে হতে পারে সব পোশাকে তাকে দেখতে ভালো লাগছে না। ছেলেদেরও এ সমস্যা হতে পারে। এই ওজন বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিষয়ে বাবা-মায়ের ভ্রান্ত ধারণা অনেকাংশে দায়ী। কোনটা স্বাভাবিক ওজন জন্মের সময়ের জন্য শিশুর ওজনের একটা চার্ট আছে। জন্মের সময় একটি স্বাভাবিক শিশুর ওজন ২ দশমিক ৫কেজি থেকে ৪ দশমিক ৫ কেজি পর্যন্ত হবে। তবে ৩ দশমিক ৫ কেজিকে গড় ওজন হিসেবে ধরা হয়। এর পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত একটি শিশুর প্রতি সপ্তাহে ১৪০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন বাড়া স্বাভাবিক। তবে বাঙালি বাচ্চাদের গড় ওজন ২ দশমিক ৯ থেকে ৩ কেজি হয়ে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে কারও ওজন ৩ দশমিক ৪ কেজিও হতে পারে। কম ওজন নিয়ে জন্মানো বাচ্চার ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৫ কেজি ওজনকে চিকিৎসকরা ‘কাট অব পয়েন্ট’ হিসেবে ধরে থাকেন। এর নীচে হলে তাকে ‘লো বার্থ ওয়েট’ হিসেবে ধরা হয়। এটা ছেলে- মেয়ে উভয়ক্ষেত্রেই। পরিপূর্ণ বিকাশ শিশুর ওজনের পাশাপাশি উচ্চতা নিয়েও মা-বাবারা উদ্বিগ্ন থাকেন। অনেকক্ষেত্রে বেশি খাবার খাইয়ে ওজন বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু চাইলেই, উচ্চতা বাড়ানো যায় না। সবসময় ওজন ও উচ্চতার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। বাচ্চার পরিপূর্ণ বিকাশ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তার ল্যাঙ্গুয়েজ ডেভেলপমেন্ট কেমন হচ্ছে অর্থাৎ সে ঠিক করে কথাবার্তা বলছে কি না? তার গ্রস মটর ডেভেলপমেন্ট কেমন, অর্থাৎ হাত-পা চালনা সঠিক হচ্ছে কি না, ফাইন মটর ডেভেলপমেন্ট অর্থাৎ হাতের লেখা- আঁকা কেমন? সোশিয়ালাইজেশন কেমন করছে? হয়তো লম্বা, চওড়া কিন্তু মিশতে পারে না। এমনও শিমুর বেলায় গ্রোথের সঙ্গে ডেভেলপমেন্টও সমান জরুরি। গ্রোথ বলতে ওজন ও উচ্চতাকে বোঝায়। আর ডেভেলপমেন্ট হলো ব্যবহার ও বুদ্ধিমত্তা (ইন্টালিজেন্স)। এ দুইয়ের সামঞ্জস্যেই একটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ।

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: