বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

বার্বি কে আক্রান্ত হিসেবে উপস্থাপন, যুক্তরাষ্ট্রে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩ লাখের বেশি শিশু-কিশোর

সমাজকাল

প্রকাশ: ১৭:১৫, ১৪ জুলাই ২০২৫

বার্বি কে আক্রান্ত হিসেবে উপস্থাপন, যুক্তরাষ্ট্রে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩ লাখের বেশি শিশু-কিশোর

বার্বি কে আক্রান্ত হিসেবে উপস্থাপন, যুক্তরাষ্ট্রে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩ লাখের বেশি শিশু-কিশোর, এবার যুক্তরাষ্ট্রে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় ৩ লাখ ৪ হাজার শিশু-কিশোরের প্রতিনিধিত্ব করছে বার্বি পুতুল। কোমরে ইনসুলিন পাম্প দেওয়া নতুন এ  বার্বির পরনে রয়েছে নীল রঙের টপ ও মিনিস্কার্ট।

সমাজকাল ডেস্ক

নতুন বার্বি পুতুলটি পরেছে নীল রঙের পোলকা-ডট টপ, ঝালর দেওয়া মিনিস্কার্ট, মোটা হিলের জুতা—এবং তার কোমরে রয়েছে ইনসুলিন পাম্প। এই প্রথম কোনো বার্বি পুতুলকে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হলো।

বার্বির নির্মাতা ম্যাটেল কাজ করেছে ব্রেকথ্রু টাইপ ১ ডায়াবেটিস (পূর্বে যা ছিল জুভেনাইল ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশন)–এর সঙ্গে। লক্ষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় ৩ লাখ ৪ হাজার শিশু-কিশোরের প্রতিনিধিত্ব করা।

এই পুতুলটি মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয় ‘ব্রেকথ্রু টাইপ ১ ডায়াবেটিস চিলড্রেন’স কংগ্রেস’-এ। এটি ওয়াশিংটনে তিনদিনব্যাপী একটি অনুষ্ঠান, যেখানে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুরা আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এবারের আয়োজনে তারা কংগ্রেসের কাছে বিশেষ ডায়াবেটিস কর্মসূচির (Special Diabetes Program) তহবিল নবায়নের অনুরোধ জানাচ্ছে, যা প্রথম চালু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে এবং বর্তমান বরাদ্দ সেপ্টেম্বরে শেষ হবে।

সাম্প্রতিক সময়ের বাজেট কাটছাঁটের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেয়েছে। ব্রেকথ্রু টাইপ ১ ডায়াবেটিস জানায়, তারা উদ্বেগ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে, কংগ্রেস পুনরায় তহবিল অনুমোদন করবে কি না।

টাইপ ১ ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন রোগ। শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভুল করে ইনসুলিন উৎপাদনকারী অগ্ন্যাশয়ের কোষকে আক্রমণ করে। ফলে শরীর নিজে থেকে যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না এবং বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা পাম্পের মাধ্যমে নিতে হয়।

এটি সাধারণত শৈশবে ধরা পড়ে, তবে যেকোনো বয়সে হতে পারে। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে আলাদা, যেখানে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, তবে কোষগুলো সেটার প্রতি সাড়া দেয় না।

নতুন বার্বির কোমরে ইনসুলিন পাম্প, হাতে গ্লুকোজ মনিটর রয়েছে—যেটি গোলাপি হৃৎপিণ্ডের টেপ দিয়ে আটকানো। তার মোবাইল ফোনে রক্তে চিনির মাত্রা দেখানো একটি অ্যাপও রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে হালকা নীল রঙের ব্যাগ, যাতে সরবরাহ ও স্ন্যাকস রাখা আছে। সবই তার জুতার সঙ্গে মানানসই। পোশাকের পোলকা-ডট ডিজাইনটি ডায়াবেটিস সচেতনতার রঙ ও প্রতীকের প্রতি সম্মান।

এমিলি মাজরেকু, যিনি নিজেও টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ব্রেকথ্রু টাইপ ১ ডায়াবেটিসে মার্কেটিং ও কমিউনিকেশন ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন, এই পুতুলটির ডিজাইনে ম্যাটেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। পুতুলটির অ্যাপে একটি দিনের রক্তে চিনির পরিমাপ দেখানো হয়েছে—১৩০ মিলিগ্রাম পার ডেসিলিটার, যা স্বাভাবিক পরিসরে পড়ে (৭০ থেকে ১৮০ mg/dl)।

তিনি প্রায় দুই বছর ধরে বিভিন্ন ফোকাস গ্রুপের মাধ্যমে এই পুতুলে কী কী উপাদান রাখা হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন, যেন এটি টাইপ ১ ডায়াবেটিস কমিউনিটিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে।

“ম্যাটেল আমাদের কাছে এসেছিল এবং বলেছিল তারা চায় এটি তাদের ‘ফ্যাশনিস্তা’ লাইনের অংশ হোক,” বলেন মাজরেকু। “আমরা সেই সুযোগ লুফে নিয়েছিলাম।”

এই লাইনটিতে এখন ১৭৫টিরও বেশি বৈচিত্র্যময় পুতুল রয়েছে—ভিন্ন ত্বকের রঙ, চোখের রঙ, চুলের ধরনসহ। এর মধ্যে রয়েছে শ্রবণযন্ত্র ব্যবহারকারী বার্বি, লাঠি ব্যবহারকারী অন্ধ পুতুল, কৃত্রিম পা যুক্ত পুতুল এবং ত্বকের রঙ হারানো রোগ (ভিটিলিগো)-এ আক্রান্ত পুতুল।

ম্যাটেলের মুখপাত্র ডেভিন ডাফ বলেন, “আমরা জানি, বার্বির মধ্যে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ নিজেদের দেখতে পেলে সেটি যথেষ্ট প্রভাব রাখে।”

২০২৪ সালে অন্ধ বার্বি ও ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত পুতুল ছিল ‘ফ্যাশনিস্তা’ সিরিজের সবচেয়ে জনপ্রিয় পুতুলের মধ্যে।

ম্যাটেল প্রথমবার পঙ্গু পুতুল তৈরি করে ১৯৯৭ সালে—যার নাম ছিল ‘শেয়ার-আ-স্মাইল বেকি’। তবে তখন ক্রেতারা অভিযোগ করেন, তার হুইলচেয়ারটি বার্বির ড্রিম হাউজের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না। এটি বাস্তব জীবনের প্রতিবন্ধকতারই প্রতিফলন।

ড. সিয়ান জোন্স, যিনি স্কটল্যান্ডের কুইন মার্গারেট বিশ্ববিদ্যালয়ের টয় বক্স ডাইভারসিটি ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, বলেন, এমন পুতুলে খেলার মধ্য দিয়ে শিশুরা ভিন্নতাকে বুঝতে ও সহানুভূতি গড়তে শেখে।

এই ধারণাটি প্রফেসর রুডিনে সিমস বিশপের ‘মিররস অ্যান্ড উইন্ডোজ’ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি—যেখানে বইয়ের চরিত্রে বৈচিত্র্য থাকলে শিশু নিজের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পায় এবং অন্যদের জীবনকে জানার জানালা খোলে।

জোন্স বলেন, যখন শিশু হুইলচেয়ার-চালিত বার্বির জন্য নিজের ক্লাসরুমে র‍্যাম্প তৈরি করে, তখন তারা উপলব্ধি করতে শেখে বাস্তব জীবনে প্রতিবন্ধীরা কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়।

নিজেই সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত জোন্স বলেন, আগে বাজারে এ ধরনের পুতুল কম পাওয়া যেত, তাকে নিজেই বানাতে হতো। এখন ম্যাটেল ও লেগোর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে পারা “অসাধারণ এক অগ্রগতি।”

এমিলি মাজরেকু বলেন, “এই পুতুলটি আমার নিজের মেয়েকে দেওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল খুবই আবেগঘন।” তিনি জানান, তার তিন বছর বয়সী মেয়েকে বার্বিটি দিয়ে তিনি বলেছিলেন এটি নিয়ে খেলতে। “সে আমাকে বলল, ‘এটা তো তোমার মতোই দেখাচ্ছে।’ আমার জন্য এটা ছিল ভীষণ বিশেষ মুহূর্ত।”

তার মেয়ে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নয়, “তবে সে আমাকে প্রতিদিন দেখে—যেভাবে আমি এই রোগ নিয়ে বেঁচে থাকি, সচেতনতা ছড়াই, আমার ডিভাইসগুলো গর্বের সঙ্গে পরি। এখন সে বার্বিকেও সেভাবে দেখে। এটা ছিল সত্যিই বিশেষ কিছু।”

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: