বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

প্রতিদিন একটি আপেল কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?

সমাজকাল

প্রকাশ: ১১:৪০, ৩০ জুন ২০২৫

প্রতিদিন একটি আপেল কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?

প্রতিদিন একটি আপেল কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?"প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের দেখা মেলে না"—এই প্রচলিত কথাটি আমরা সবাই শুনেছি।

সমাজকাল ডেস্ক

"প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের দেখা মেলে না"—এই প্রচলিত কথাটি আমরা সবাই শুনেছি। কিন্তু এই সাধারণ ফলটি কি সত্যিই আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর এমন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে? বিশ্বজুড়ে আপেলের জনপ্রিয়তা অপরিসীম। প্রতিবছর প্রায় ১০ কোটি টন আপেল উৎপাদিত হয়। বিভিন্ন রঙ ও স্বাদের এই ফল বহুদিন ধরেই আমাদের সুস্থ রাখার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। "প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের দেখা মেলে না" কথাটির উৎপত্তি হয় ১৮৬৬ সালে লেখা একটি ওয়েলশ প্রবাদ থেকে— "রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি আপেল খাও, তাহলে ডাক্তার তার রুটি রোজগার করতে পারবে না।" কিন্তু এই বহুল প্রচলিত কথার পেছনে আদৌ কি কোনো বৈজ্ঞানিক সত্য আছে? এবং আপেল কি অন্যান্য ফলে তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যকর?   কেন আপেল এত স্বাস্থ্যকর? প্রথমেই আপেলের পুষ্টিগুণ নিয়ে ভাবি। এটি ফ্লাভানলসহ নানা ফাইটোকেমিক্যালের ভালো উৎস। এই যৌগগুলো ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। আপেলে থাকা পলিফেনল, যেমন—অ্যান্থোসায়ানিন (যা লাল রঙের আপেলের খোসার রঙের উৎস), হৃদস্বাস্থ্য উন্নত করে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য পলিফেনল হলো ফ্লোরিডজিন, যা রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও আপেলে রয়েছে প্রচুর আঁশ, বিশেষ করে পেকটিন। এটি রক্তে এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) কমায় এবং খাদ্য থেকে চিনি ও চর্বি শোষণ হ্রাস করে রক্তে সুগার স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো যে উপকারে আসে, তা বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে। ২০১৭ সালের একটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আপেল খাওয়ার সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৮% হ্রাস পাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আর ২০২২ সালের আরেক গবেষণায় দেখা যায়, এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে আপেল বা আপেলজাত খাবার খেলে কোলেস্টেরল হ্রাস পেতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪০% পর্যন্ত কমাতে পারে, যার পেছনে প্রধানত আপেলের মতো ফলে থাকা জৈব উপাদান ও ফাইটোকেমিক্যালই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে প্রশ্ন হলো, আপেল কি অন্য ফলগুলোর তুলনায় বেশি কার্যকর? মধ্য টেনেসি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জ্যানেট কোলসন বলেন, "আপেলে খুব বেশি ভিটামিন সি নেই, লৌহ বা ক্যালসিয়ামও না, কিন্তু এতে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য দারুণ কাজ করে।"   আপেল বনাম অন্যান্য ফল ভেরোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক ফ্লাভিয়া গুজ্জো বলেন, আপেলের উপকারি যৌগ যেমন পলিফেনল, তা অন্যান্য ফলেও পাওয়া যায়। তবে আপেলের কিছু বিশেষ পলিফেনল—যেমন ফ্লোরিডজিন—অন্যান্য ফলে খুব একটা নেই। এটি রক্তে চিনি শোষণ হ্রাসে সহায়ক। এছাড়াও আপেলে থাকে ফেনলিক যৌগ, যা হৃৎরোগ, ক্যান্সার, হাঁপানি, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি হ্রাসে ভূমিকা রাখে। এক গবেষণায় দেখা যায়, আমেরিকানদের ফেনলিক গ্রহণের এক-পঞ্চমাংশই আসে আপেল থেকে। আরো একটি কারণ হলো, আপেল সহজলভ্য। এটি দামেও সাশ্রয়ী, সংরক্ষণযোগ্য এবং বছরজুড়ে পাওয়া যায়। ফলে নিয়মিত খাওয়া অনেকের পক্ষেই সহজ। ডাক্তার নয়, বরং ফার্মাসিস্টকে দূরে রাখতে পারে ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় প্রায় ৯,০০০ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা হয়, তারা একদিনে কী খেয়েছে, এবং তাতে তাদের স্বাভাবিক ডায়েটের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। দেখা যায়, যারা নিয়মিত আপেল খান তারা তুলনামূলকভাবে কম ডাক্তার দেখান, তবে এটি পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল না, কারণ আপেলখাদকরা সাধারণত বেশি শিক্ষিত ও কম ধূমপায়ী। তবে গবেষণাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলে পৌঁছায়—যারা প্রতিদিন আপেল খান, তারা কম ঔষধনির্ভর হন। অর্থাৎ, "প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ফার্মাসিস্টের দেখা কম মেলে"—এ কথাটি হয়তো আরও বাস্তবসম্মত।   কিভাবে খাবেন বেশি উপকারের জন্য?   গুজ্জো পরামর্শ দেন আপেলের খোসা না ছাড়িয়ে খাওয়ার, কারণ বেশিরভাগ পলিফেনল থাকে খোসাতেই। তিনি আরও বলেন, পুরোনো জাতের আপেলে আধুনিক জাতের তুলনায় পলিফেনলের পরিমাণ বেশি থাকে। আধুনিক জাতগুলোর স্বাদ উন্নত করার জন্য পলিফেনল কমে গেছে। আপেলের রঙ নিয়ে ভাবার দরকার নেই—লাল বা সবুজ উভয় রঙেই উপকারি যৌগ রয়েছে।   প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়া হয়তো আপনাকে একেবারে ডাক্তারের প্রয়োজন থেকে মুক্ত রাখবে না, তবে এটি আপনার দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য এবং ওষুধ নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে সবশেষে মূল কথা হলো—আপেল খাওয়া অবশ্যই ভালো, কিন্তু তা যেন হয় একটি বৈচিত্র্যময়, উদ্ভিদভিত্তিক স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ।   অনুবাদ করা হয়েছে বিবিসি থেকে

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: