বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

পতৌদির নবাব থেকে বলিউডের রোমান্টিক হিরো

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬:১৩, ১৬ আগস্ট ২০২৫

পতৌদির নবাব থেকে বলিউডের রোমান্টিক হিরো

ভারতের চলচ্চিত্রজগতে তিনি এক অনন্য নাম—সাইফ আলি খান। অভিনয়, ব্যক্তিত্ব এবং বংশগত গৌরব—সব মিলিয়ে তিনি বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী তারকা। জন্মেছেন ১৯৭০ সালের ১৬ আগস্ট, দিল্লিতে, পতৌদি পরিবারের রাজকীয় আভিজাত্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে। পিতা মনসুর আলি খান পতৌদি ছিলেন ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, আর মা শর্মিলা ঠাকুর বাংলা ও হিন্দি সিনেমার কিংবদন্তি নায়িকা। ২০১১ সালে পিতার মৃত্যুর পর তিনি হন পতৌদির ১০ম নবাব।

ক্যারিয়ারের শুরু ও সংগ্রাম
১৯৯৩ সালে পরম্পরা দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু হলেও প্রথম সাফল্য আসে ইয়ে দিল্লাগি এবং ম্যায় খেলাড়ি তু অনাড়ি (১৯৯৪)-এর মাধ্যমে। ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে একের পর এক ব্যর্থ ছবিতে অভিনয়ের কারণে ক্যারিয়ার পড়েছিল মন্দায়। তবে ১৯৯৯ সালে কাঁচে ধাগে ও হাম সাথ সাথ হ্যাঁয় তাঁকে আবার আলোচনায় ফিরিয়ে আনে।

তারকাখ্যাতির পথে
২০০১ সালের দিল চাহতা হ্যায় সিনেমা ছিল সাইফের ক্যারিয়ারের মোড় ঘোরানো কাজ, যা তাকে শহুরে রোমান্টিক চরিত্রের জন্য পরিচিত করে তোলে। এরপর কাল হো না হো (২০০৩)-এর জন্য পান প্রথম ফিল্মফেয়ার সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার। হাম তুম (২০০৪) তাকে এনে দেয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার—সেরা অভিনেতা বিভাগে। পরবর্তীতে পরিণীতা, সালাম নমস্তে, ওমকারা, লাভ আজ কাল এবং ককটেল তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়ায়।

বহুমুখী অভিনয় ও সমালোচকপ্রশংসা
রোমান্টিক কমেডির পাশাপাশি সাইফ এক হাসিনা থি, ওমকারা, তানহাজি এবং সেক্রেড গেমস-এ অভিনয় করে প্রমাণ করেছেন তার বহুমুখীতা। বিশেষ করে ওমকারা-য় ইয়াগোর চরিত্রে তার অভিনয় বলিউডে খলনায়ক চরিত্রের নতুন মানদণ্ড স্থাপন করে।

ব্যক্তিগত জীবন
প্রথম স্ত্রী অমৃতা সিংয়ের সঙ্গে ১৩ বছরের সংসারে দুটি সন্তান—সারা ও ইব্রাহিম। ২০১২ সালে অভিনেত্রী কারিনা কাপুরকে বিয়ে করেন, যাঁর সঙ্গে তার দুই পুত্র তৈমুর ও জাহাঙ্গীর। সাইফ-কারিনা জুটি ভারতের সবচেয়ে আলোচিত সেলিব্রিটি দম্পতিদের মধ্যে অন্যতম।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি
একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সাতটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং ২০১০ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী—এসবই তাঁর ঝুলিতে।

সাম্প্রতিক সময়ের চ্যালেঞ্জ
২০২৩ সালে আদিপুরুষ সমালোচকদের সমালোচনার মুখে পড়লেও ২০২৪-এর দেবারা: পার্ট ওয়ান বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য আনে। তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মুম্বাইয়ের বাসভবনে এক ডাকাতি ও ছুরিকাঘাতের ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে ওঠেন।

পর্দার বাইরে
সাইফ টেলিভিশন শো সঞ্চালনা, আন্তর্জাতিক কনসার্ট ট্যুর এবং দাতব্য কার্যক্রমে সক্রিয়। অলিম্পিক গোল্ড কুয়েস্টসহ বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে অর্থ ও সময় দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

সাইফ আলি খান শুধু রূপালি পর্দার নায়ক নন, তিনি এক রাজবংশের উত্তরাধিকারী, আধুনিক বলিউডের রোমান্টিক কমেডির পোস্টার বয়, আবার প্রয়োজনমতো তুখোড় খলনায়ক। তার জীবনের উত্থান-পতন, সাফল্য-ব্যর্থতা—সবই এক সিনেমাটিক গল্পের মতো, যা দর্শকদের কাছে চিরকাল আকর্ষণীয় হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: