বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

রূপালী গিটারের কিংবদন্তি

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪:৩৭, ১৬ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৫২, ১৬ আগস্ট ২০২৫

রূপালী গিটারের কিংবদন্তি

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ার খরনা ইউনিয়নে জন্ম নেন আইয়ুব বাচ্চু রবিন। বাবা ইশহাক চৌধুরী ও মা নুরজাহান বেগমের ঘরে বড় ছেলে তিনি।  তিনি বড় হন একটি সম্ভ্রান্ত কিন্তু ধর্মপ্রাণ পরিবারে। ১৯৭৩ সালে তার ১১তম জন্মদিনে বাবা উপহার দেন একটি গিটার—সেই থেকেই শুরু গিটারের প্রেমে ডুব। কৈশোরে লেড জেপলিন, ডিপ পার্পল, কুইন, জিমি হেনড্রিক্সের সংগীত তার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। গিটারের প্রথম গুরু ছিলেন চট্টগ্রামের বার্মিজ নাগরিক জেকব ডায়াজ।

প্রথম ব্যান্ড থেকে সোলস
কলেজ জীবনে সহপাঠীদের নিয়ে গঠন করেন "গোল্ডেন বয়েজ", যা পরে হয় "আগলি বয়েজ"। ১৯৭৭ সালে যোগ দেন ফিলিংস ব্যান্ডে, যেখানে কাজ করেন জেমসের সাথে। ১৯৮০ সালে নকিব খানের প্রস্তাবে সোলসে যোগ দিয়ে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। সোলসের সঙ্গে সুপার সোলস (১৯৮২), কলেজের করিডোরে (১৯৮৫), মানুষ মাটির কাছাকাছি (১৯৮৭) এবং ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট (১৯৮৮) অ্যালবামে বাজান গিটার ও গান করেন।

এলআরবি: রক বিপ্লবের সূচনা
১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল গঠন করেন লিটল রিভার ব্যান্ড (পরবর্তীতে এলআরবি)। ব্যান্ডের প্রথম ডাবল অ্যালবাম এলআরবি ১ ও এলআরবি ২ (১৯৯২) প্রকাশের পরই তুমুল জনপ্রিয়তা পান। তৃতীয় অ্যালবাম সুখ (১৯৯৩)-এর "চলো বদলে যাই" গানটি বাংলা রকের আইকনে পরিণত করে তাকে। এলআরবি দেশের বাইরে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে কনসার্ট করা একমাত্র বাংলাদেশি ব্যান্ড।

একক ক্যারিয়ারের সোনালি অধ্যায়
সোলসে থাকার সময়ই বের হয় প্রথম একক অ্যালবাম রক্ত গোলাপ (১৯৮৬), এরপর ময়না (১৯৮৮)। তবে ১৯৯৫ সালের কষ্ট অ্যালবাম আইয়ুব বাচ্চুকে একক গায়ক হিসেবে অমরত্ব দেয়। "কষ্ট পেতে ভালোবাসি", "কষ্ট কাকে বলে", "জেগে আছি একা"—প্রতিটি গান শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন পায়। পরবর্তী সময়ে প্রেম তুমি কি! (২০০২), সাউন্ড অব সাইলেন্স (২০০৭) সহ একের পর এক হিট অ্যালবাম উপহার দেন।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (৬ বার) – এলআরবির সাথে
বাচসাস পুরস্কার – সেরা পুরুষ কণ্ঠশিল্পী (২০০৪)
টেলেসিনে আজীবন সম্মাননা (২০১৭)
রূপালী গিটার ভাস্কর্য – চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে, তার সম্মানে স্থাপিত ১৮ ফুট উচ্চতার গিটার।

ব্যক্তিগত জীবন
১৯৯১ সালের ৩১ জানুয়ারি বিয়ে করেন দীর্ঘদিনের প্রণয়িনী ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনাকে। দুই সন্তানের জনক—মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব ও ছেলে আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন পরিবারের প্রতি নিবেদিত, সঙ্গীতে যেমন আবেগী ছিলেন তেমনি সম্পর্কেও।

শেষ কনসার্ট ও প্রয়াণ
২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর রংপুরে ছিল তার শেষ কনসার্ট। দুই দিন পর, ১৮ অক্টোবর সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল মাত্র ৫৬ বছর। তাকে চট্টগ্রামের চৈতন্য গলির পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের পাশে সমাহিত করা হয়।

আইয়ুব বাচ্চুর উত্তরাধিকার
বাংলাদেশি রককে বিশ্বমঞ্চে পরিচিত করা, গিটারের সুরে আবেগ ও শক্তির মেলবন্ধন ঘটানো, এবং অগণিত তরুণকে সঙ্গীতে অনুপ্রাণিত করা—এসবই আইয়ুব বাচ্চুর অমর অবদান। তার কণ্ঠের গভীরতা, গিটারের ঝংকার এবং জীবনের প্রতি ভালবাসা তাকে চিরকাল বাংলার সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে বাঁচিয়ে রাখবে।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: