বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মিয়ানমারে : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬:০৮, ২৫ আগস্ট ২০২৫

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মিয়ানমারে : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারেই নিহিত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সংকট নিরসনে আর দেরি করা যাবে না—সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারের হোটেল বে ওয়াচে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আয়োজিত অংশীজন সংলাপে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “২০১৭ সালের এই দিনে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনো প্রতিদিন নতুন রোহিঙ্গারা আসছে। ইতিহাসের এই মুহূর্তে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব সঠিক অবস্থান নেওয়া এবং জাতিগত নিধন বন্ধ করানো।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “রাখাইন সম্প্রদায়ের শেষ চিহ্নটুকু দেখতে অপেক্ষা করা সাংঘাতিক ভুল হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব মার্চে রোহিঙ্গা শিবিরে এসে তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। এখন আমাদের কাজ সেই আশাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।”

রোহিঙ্গা সংকটের ভয়াবহ চিত্র
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে, যা কক্সবাজারকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে পরিণত করেছে। প্রতি বছর ২২ হাজার শিশু এসব ক্যাম্পে জন্ম নিচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমারে এখনো ৫ লাখের কম রোহিঙ্গা অবস্থান করছে, যা প্রমাণ করে সেখানে নির্যাতন চলছেই।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ আট বছরে আমাদের অর্থনীতি, সমাজ, পরিবেশ ও শাসনব্যবস্থায় বড় প্রভাব পড়েছে। এই চ্যালেঞ্জ একা বাংলাদেশ সামলাতে পারবে না।”

সংকট নিরসনে সাত দফা প্রস্তাব
অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাতটি প্রস্তাব তুলে ধরেন—
১. নিরাপদ প্রত্যাবাসন: রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসইভাবে নিজ দেশে ফেরানোর রোডম্যাপ দ্রুত তৈরি করতে হবে।
২. টেকসই অর্থায়ন: আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোকে প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নিপীড়ন বন্ধ: মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিতে বাধ্য করতে হবে। নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. গঠনমূলক সংলাপ: মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহিংসতা বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিতে সংলাপের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে।
৫. আসিয়ানের ভূমিকা: আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সক্রিয় হতে হবে।
৬. জাতিগত নিধন রোধ: আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
৭. ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে দায়বদ্ধতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যু বৈশ্বিক এজেন্ডায় রাখতে হবে যতদিন না তারা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। সংকট সমাধানে বাংলাদেশের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই সক্রিয় ভূমিকা নিতে

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: