দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ১৯ বিষয়ে ঐকমত্য
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:৩০, ১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৩৯, ১৪ আগস্ট ২০২৫

দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ১৯ বিষয়ে ঐকমত্য, জাতীয় সনদের পথে ঐকমত্য কমিশন
ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীতিগত ঐকমত্য এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এসব বিষয়ে গৃহীত প্রস্তাবসমূহকে “জুলাই জাতীয় সনদ”-এ রূপান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের ২৩তম দিনের আলোচনার পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি। কমিশনের অন্যান্য সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক রীয়াজ জানান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের আওতায় অর্থবিল ও আস্থা ভোট এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বিশেষ ধারা যুক্ত করার মতো স্পর্শকাতর বিষয়েও মতৈক্য এসেছে। নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির প্রস্তাব, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, সুপ্রিম কোর্ট পুনর্গঠন, এবং প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে দায়িত্ব পালনের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। এছাড়া, পিএসসি, দুদক, নিয়ন্ত্রক ও মহা হিসাব নিরীক্ষক (সিএজি), এবং ন্যায়পাল নিয়োগ বিষয়ে সংবিধানে নতুন ধারা না এনে প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গঠনমূলক আলোচনায় উঠে এসেছে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রপতির নির্বাচনী পদ্ধতি ও ক্ষমতা পুনর্নির্ধারণ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত প্রস্তাব। আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির প্রশ্ন। তবে আলী রীয়াজ জানান, নারীর আসনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংক্রান্ত আলোচনায় গণফোরাম, বাসদ (মার্কসবাদী), সিপিবি এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ভিন্নমত এতটাই স্পষ্ট ছিল যে, তারা সভা বর্জন করে। জাসদ এই ইস্যুতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েই অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, আলোচনার ফলাফল বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরও গভীর সংলাপ প্রয়োজন। একইসঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকেও একটি সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন কাঠামো তৈরির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও এবি পার্টিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় পর্যায়ের এই সংলাপ শুরু হয় গত ২ জুন, যখন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর টানা ২৩টি সেশনে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই উদ্যোগকে দেশে রাজনৈতিক সংস্কার ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো প্রণয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।