রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে জুলাই সনদের প্রস্তাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬:৪৪, ১৭ আগস্ট ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের ধারাবাহিক আলোচনার পর জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো এই খসড়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নিয়ম, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং অভিশংসন প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, প্রস্তাবিত খসড়ায় কোনো মন্তব্য বা সংশোধনী থাকলে আগামী ২০ আগস্ট বিকেল ৪টার মধ্যে কমিশনের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।
অভিশংসন প্রক্রিয়া : সনদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে।
প্রথমে আইনসভার নিম্নকক্ষে অভিশংসন প্রস্তাব আনা হবে এবং তা দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাস করতে হবে।
এরপর প্রস্তাব যাবে উচ্চকক্ষে, যেখানে শুনানি শেষে আবারও দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেলেই অভিশংসন কার্যকর হবে।
এই প্রস্তাবে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও জোট একমত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি : প্রস্তাবিত সংস্কারে বলা হয়েছে—রাষ্ট্রপতি হবেন আইনসভার উভয় কক্ষের সদস্যদের গোপন ভোটে নির্বাচিত। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সময় তিনি কোনো রাষ্ট্রীয়, সরকারি বা রাজনৈতিক দলের পদে থাকতে পারবেন না।
ক্ষমতা ও দায়িত্বে নতুন ভারসাম্য
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনতে সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রপতি নিজ এখতিয়ার অনুযায়ী নিম্নলিখিত পদে নিয়োগ দিতে পারবেন—
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য
তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য । বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সদস্য। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা নিয়েও নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করতে পারবেন।
তবে এর আগে মামলার বাদী বা ভুক্তভোগী পরিবারের সম্মতি নিতে হবে। এই প্রস্তাবে ২৯টি দল ও জোট সমর্থন দিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির ভূমিকা ও মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিত করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অভিশংসন প্রক্রিয়া ও ক্ষমতার ভারসাম্য সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের সাংবিধানিক কাঠামোয় এটি হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।