শাহরিয়ার হত্যার বিচার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ছাত্রদলের বিক্ষোভ
সমাজকাল
প্রকাশ: ১৬:১৭, ১৫ মে ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষিত আধা দিবস শোক প্রত্যাখ্যান করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা পূর্ণদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ধর্মঘট পালন করছেন।
এ ঘটনায় ছাত্রদলও সক্রিয়ভাবে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। দুপুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শাহরিয়ারের হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদল বিক্ষোভ করে, অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
? আন্দোলনের চিত্র
কলাভবন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, আজ কোনো শিক্ষার্থী যেন ক্লাস কিংবা প্রশাসনিক কার্যক্রমে অংশ না নেয়।
বিকেল ৫টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।
? কী ঘটেছিল সেদিন?
গত মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে শাহরিয়ার নিহত হন।
তিনি ছিলেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর (২০১৮-১৯) শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা।
শাহরিয়ার ছিলেন হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে।
? তদন্ত ও গ্রেপ্তার
শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তারা হলেন:
মো. তামিম হাওলাদার (৩০), মাদারীপুর সদর
পলাশ সরদার (৩০)
সম্রাট মল্লিক (২৮), ডাসার থানা
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা ভাসমান হকার ও মাদকাসক্ত।
আদালত তাঁদেরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
? তদন্ত কমিটি গঠন
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যারা হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তদন্ত করবে।
? ঘটনার পটভূমি: কে ছিলেন শাহরিয়ার সাম্য?
শাহরিয়ার আলম সাম্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর (২০১৮-১৯) শিক্ষার্থী। তিনি স্যার এ এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন এবং হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়।
শাহরিয়ার ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একজন সংস্কৃতিমনা ছাত্র। তাঁর সহপাঠীরা ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা তাঁকে মেধাবী, দায়িত্বশীল এবং সংগ্রামী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন।
? হত্যাকাণ্ডের বিবরণ: কীভাবে নিহত হলেন?
২০২৫ সালের ১৩ মে (মঙ্গলবার) রাতে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘটেছিল এই মর্মান্তিক ঘটনা। একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে শাহরিয়ারকে ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, জাতীয় পর্যায়েও নিন্দা ও ক্ষোভ দেখা দেয়। ছাত্র সংগঠনগুলো একে পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে।
? পুলিশি তদন্ত ও গ্রেপ্তার:
শাহরিয়ারের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ রাতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
তাঁরা হলেন:
মো. তামিম হাওলাদার (৩০), মাদারীপুর সদর
পলাশ সরদার (৩০)
সম্রাট মল্লিক (২৮), ডাসার থানা
পুলিশ জানায়, এরা ভাসমান হকার এবং রাতে মাদকসেবন করে। ছুরি হামলার ঘটনায় তাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা:
ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের শোক দিবস ঘোষণাকে "অপ্রতুল ও দায়সারা" বলে প্রত্যাখ্যান করে। তাঁরা দাবি তোলেন—এই হত্যাকাণ্ডের দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়।
? রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও আন্দোলনের বিস্তার:
এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—শাহরিয়ার কেবল একজন রাজনীতি সচেতন ছাত্রই ছিলেন না, বরং একটি গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতীক ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, প্রশাসনিক ভবনে তালা এবং বিক্ষোভ সমাবেশের মতো কঠোর কর্মসূচি পালন করছে।
? নিরাপত্তা ও বিচার প্রশ্নে উদ্বেগ:
শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রশাসনিক জবাবদিহি এবং ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন জানতে চাইছে—ক্যাম্পাস কি আদৌ নিরাপদ? নাকি রাজনীতি, সহিংসতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার শিকার হতে হবে একজন শিক্ষার্থীকে বারবার?