সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

| ১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

৬ লেনের দাবিতে ৩ ঘন্টা বন্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫:৫০, ৩০ নভেম্বর ২০২৫

৬ লেনের দাবিতে ৩ ঘন্টা বন্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক

৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ। ছবি: সংগৃহীত

৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। রবিবার (৩০ নভেম্বর) তিন ঘন্টা তারা এই সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখেন। 

সকাল ১০ টায় মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুটির দু'পাশে রশি দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক উন্নয়ন আন্দোলন নামের একটি সংগঠনের নামে জনতা এই ব্যারিকেড দেন। আর সেতুটি ওপর ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে চলে মিছিল ও বিক্ষোভ। স্লোগানে স্লোগানে সড়কের একপাশ থেকে অন্য পাশে চলে শিক্ষার্থীদের মিছিল। এসময় অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোন যান চলতে দেওয়া হয়নি। 

দুর্ভোগ এড়াতে এবং ব্যারিকেড তুলে নিতে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন ও দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর দুপুর ১ টায় প্রশাসনের আশ্বাসে ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিত করে আন্দোলনকারীরা।

সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক ইব্রাহীম ফারুক ছিদ্দিকী জানান, একের পর এক দূর্ঘটনার ধারাবাহিক প্রাণহানির ঘটনার পর মহাসড়ক ৬ লেনের করার দাবি অনেক দিনের। এই নিয়ে মানববন্ধন সহ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান কিছু হচ্ছে না। তবে দৃশ্যমান কিছুই হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করতে হয়েছে। প্রশাসন ইতিমধ্যে ৭ দিনের মধ্য্য অগ্রগতির আশ্বাস দিয়েছেন ফলে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।

দাবি না মানলে আবারও কর্মসূচির দেয়ার কথা জানান তিনি। 

এই সময় মহাসড়ক ব্যারিকেডের কারণে মহাসড়কের দু'লেগে যায় দীর্ঘ যানজট। দুর্ভোগে পড়েন পর্যটকসহ যাত্রীরা। অনেকে পায়ে হেঁটে রওনা দেন।

কক্সবাজাররের খুরুশকুলে বাসিন্দা রফিক আহমদ বলেন, প্রতিদিন নানা কারণেই এই সড়ক দিয়ে আসা যাওয়া। প্রায়ই শুনতে পায় ২-৩টা সড়ক দূর্ঘটনা হয়েছে। আমরা এই মহাসড়কে জীবন নিয়ে ঘর থেকে বের হই। আমরা যে আবার ঘরে ফিরব এটার কোন নিশ্চয়তা নেই।’

ঈদগাঁর বাসিন্দা ইয়াছিন আরাফাত বলেন, “চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যে পরিমাণ ৩ চাকার গাড়ি রয়েছে; তা বাংলাদেশের আর কোন মহাসড়কে আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এই ৩ চাকার গাড়ির কারণে তো দূর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এগুলো তো মহাসড়ক থেকে দূর করতে পারছে না প্রশাসন। এখন কাকে দোষ দিবেন?”

চকরিয়ার এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, “চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি খুবই সরু। কিছু দূর পরপর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। লবণবোঝাই ট্রাক আর ৩ চাকার গাড়িগুলোর চলাচল বেশি। যার কারণে এই মহাসড়কে দূর্ঘটনা বেশি ঘটছে।”

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বাস চালক রহিম উদ্দিন বলেন, “কক্সবাজার একটি পর্যটন নগরী। বাংলাদেশের সকল এলাকার মানুষ এখানে যাতায়াত। কিন্তু রাস্তা ছোট, যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। তার ওপর ৩ চাকার দৌরাত্ম অনেক বেশি। এসব কারণে দূর্ঘটনা বেশি হচ্ছে।”

চকরিয়ার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাইফ বলেন, “চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যান ও নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় না। এই মহাসড়কে অসংখ্য বাঁক রয়েছে, লবণবোঝাই ট্রাক থেকে পানি পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এসব সমস্যা নিরসনে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।”

এদিকে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, বেপরোয়া গতির যানবাহন ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে এই মহাসড়ক চারলেন কিংবা ছয়লেনে উন্নীত করা ছাড়া বিকল্প নেই মনে করেন বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজারস্থ মালুমঘাট হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক জিয়া উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দূর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে যানবাহনের বেপরোয়া গতি। হাইওয়ে পুলিশ সড়কে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে ৭০ থেকে ৮০ ওপরে গতি হলেই মামলা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ৩ চাকার গাড়ি গুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

কক্সবাজারস্থ বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কক্সবাজার পর্যটন নগরী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা গাড়িযোগে কক্সবাজার আসছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে মহাসড়কটি অনেক ছোট আর যানবাহনের পরিমাণ অনেক বেশি। যদি এই মহাসড়কটি ৪ থেকে ৬ লেনে উন্নীত করা হয় তাহলে দূর্ঘটনা কমে আসবে।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, “চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন ফাইনাল রিপোর্টের অপেক্ষা আছি আমরা। ফাইনাল রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী প্রক্রিয়ার কাজগুলো শুরু হবে।

বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ি, এবছরের গত ১১ মাসে এই মহাসড়কে ১৫৫টি দূর্ঘটনায় ঘটেছে। এসব দূর্ঘটনায় মারা গেছে ১৫০ জন ও আহত হয়েছে ৩৫১ জন। এসব দূর্ঘটনার পেছনে অপ্রশস্ত সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক, বেপরোয়া গতি, লবণাক্ততার কারণে পিচ্ছিল সড়ক, অবৈধ যানবাহন চলাচল ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

‘আর.ভি ড. ফ্রিডটজফ নানসেন’ জরিপ; বঙ্গোপসাগরে ৬৫ নতুন প্রজাতির মাছ, বাংলাদেশ অংশেই ৫ প্রজাতি
অবৈধ আহরণে সমুদ্রে কমে যাচ্ছে মাছ: ফরিদা আখতার
খালেদা জিয়ার সুস্থতায় ঢাবিতে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল
বিএনপির হাতেই দেশের সার্বভৌমত্ব: মির্জা আব্বাস
১৭০ আসনে জেএসডির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ: দেখে নিন প্রার্থী কারা
ছাদে দুই কিশোর, বন্ধ মেট্রোরেল চলাচল
সরকারি প্লট বরাদ্দ দুর্নীতি মামলা : শেখ হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলার রায় সোমবার
হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিলো: তদন্ত কমিশন
নারায়ণগঞ্জে বাউলদের সমাবেশ মঞ্চের ফেস্টুন ছিঁড়ল যুবক, আটক
তারেক রহমান ঢাকায় না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এটা ঠিক না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সীমান্ত হত্যার সমাধান আপাতত দেখছি না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের
বিজয়ের মাসজুড়ে শিল্পকলায় যাত্রাপালা প্রদর্শনী, ৩১ টি দল থাকবে
কামালকে প্রত্যর্পণের তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেই: উপদেষ্টা
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত,
সচিবালয়ের আগুন নিভেছে
ফিরতে চাইলে তারেক রহমানকে ওয়ান-টাইম পাস দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
খুলনায় আদালত চত্বরে গুলিতে নিহত ২
১ ডিসেম্বর থেকে রাত্রে থাকা যাবে সেন্টমার্টিনে
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় রাশিয়ার শুভেচ্ছা–বার্তা