শেখ হাসিনার নির্দেশ—‘যেখানেই পাবে, গুলি করবে’
সমাজকাল
প্রকাশ: ১১:৩৬, ৯ জুলাই ২০২৫

শেখ হাসিনার নির্দেশ—‘যেখানেই পাবে, গুলি করবে’। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে সরাসরি প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—এমন বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস।
সমাজকাল ডেস্ক
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে সরাসরি প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—এমন বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপের সূত্র ধরে বিবিসি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা নিজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন, "যেখানেই ওদের পাবে, গুলি করবে।"
ফাঁস হওয়া অডিও ও নিশ্চিতকরণ
‘Ex-Bangladesh leader authorized deadly crackdown, leaked audio suggests’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি অনুসারে, অডিওটি রেকর্ড করেছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নজরদারি সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (NTMC)। অডিওটি চলতি বছরের মার্চে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কে বা কারা এটি ফাঁস করেছে তা এখনও অজানা।
বাংলাদেশ পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) জানিয়েছে, কণ্ঠটি শেখ হাসিনারই। বিবিসিও আলাদাভাবে এয়ারশর্ট নামের একটি আন্তর্জাতিক অডিও ফরেনসিক সংস্থার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করিয়ে নিশ্চিত হয়েছে যে, অডিওটি সম্পূর্ণ আসল এবং কোনোরকম এডিট বা বিকৃতি করা হয়নি।
বিচার শুরু, রেকর্ড হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ
বর্তমানে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা ফাঁস হওয়া এই অডিও রেকর্ডটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপনের পরিকল্পনা করছেন।
রক্তাক্ত প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত কোটা বাতিলের দাবিতে। খুব দ্রুত এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়ে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। বিবিসির তথ্যানুসারে, জাতিসংঘ বলছে, এ আন্দোলনে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন ছিল ৫ আগস্ট—যেদিন জনতার ঘেরাওয়ের মুখে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান।
বিবিসির অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে—
শেখ হাসিনার ফোনালাপটি ছিল ১৮ জুলাই ২০২৪ সালের।
ওই ফোনালাপের পরই আন্দোলন ভয়াবহ আকার নেয়।
পুলিশের গুলিতে নিহতের ভিডিও ভাইরাল হলে জনরোষ চরমে পৌঁছে।
এরপর ঢাকায় সামরিক অস্ত্র ব্যবহার শুরু হয়, যা পুলিশের নথিতেও লিপিবদ্ধ হয়েছে।
আইনজীবীদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া
বৃটিশ মানবাধিকার আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরামর্শদাতা টোবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেন, “এই রেকর্ড গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি সঠিকভাবে যাচাই করা হয়েছে। অন্য প্রমাণের সঙ্গেও এর মিল রয়েছে।”
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, “আমরা নিশ্চিত নই যে উক্ত অডিও আসল কি না। এটি অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বেআইনি প্রমাণও হতে পারে না।”
এই প্রতিবেদন ঘিরে দেশের রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বিবিসির এই অনুসন্ধান।