ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চীনের অবস্থান স্পষ্ট “রাশিয়ার পরাজয় আমরা মেনে নেবো না”
সমাজকাল
প্রকাশ: ১৯:২৫, ৫ জুলাই ২০২৫

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চীনের অবস্থান স্পষ্ট “রাশিয়ার পরাজয় আমরা মেনে নেবো না”। অবশেষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল চীন। বেইজিং এ যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
সমাজকাল ডেস্ক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বহুল আলোচিত অবস্থান অবশেষে স্পষ্ট করল চীন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা ক্যালাসের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, “বেইজিং কোনও অবস্থাতেই ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় মেনে নেবে না।”
চার ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ এই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক নানা জটিল ইস্যু যেমন সাইবার নিরাপত্তা, বাণিজ্য ভারসাম্য, বিরল খনিজ সম্পদ, তাইওয়ান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়াদি আলোচনায় এলেও ইউক্রেন যুদ্ধ ছিল কেন্দ্রীয় প্রসঙ্গ। বৈঠকে উপস্থিত একজন ইউরোপীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওয়াং ই-এর কথায় স্পষ্ট—চীন মনে করে, রাশিয়ার পরাজয় হলে যুক্তরাষ্ট্র তার পূর্ণ মনোযোগ চীনের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাই বেইজিং বরং দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতেই বেশি স্বস্তি অনুভব করছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র মাও নিং শুক্রবার বলেন, “চীন ইউক্রেন ইস্যুতে কোনও পক্ষ নয়। আমাদের অবস্থান সবসময় বস্তুনিষ্ঠ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক নিষ্পত্তি—যুদ্ধ নয়।” তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে কেউই লাভবান হবে না।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউক্রেনে হামলার কিছু আগে। এর পর থেকে দুই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর হয়েছে। বেইজিং দাবি করছে, তারা যুদ্ধের কোনো পক্ষ নয়, বরং শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারী। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর সন্দেহ, চীন রাশিয়াকে সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে সংঘাতকে উসকে দিচ্ছে।
ইউক্রেন ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যেগুলো রাশিয়াকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা এক ছবি প্রকাশ করেন, যেখানে রাশিয়ান ড্রোনের ধ্বংসাবশেষে লেখা ছিল, “চীন নির্মিত, ২০ জুন।” হামলায় ওডেসায় চীনা কনস্যুলেটের ভবন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সিবিহা বলেন, “রাশিয়ার হামলা কিভাবে উত্তর কোরিয়ার সেনা, ইরানি অস্ত্র এবং কিছু চীনা কোম্পানির সহায়তায় আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে—এই ঘটনা তারই প্রমাণ।” ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন সময় চীনা নাগরিকদের রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধের অভিযোগও উঠেছে, যদিও বেইজিং সেসব অস্বীকার করেছে।
চীনের বর্তমান অবস্থান থেকে পরিষ্কার, রাশিয়ার পরাজয় তারা শুধুমাত্র কৌশলগতভাবে নয়, বরং ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থেও মেনে নিতে চায় না। এতে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন মেরুকরণের আশঙ্কা বাড়ছে।