মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১৪ আশ্বিন ১৪৩২

হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে নতুন শান্তি পরিকল্পনার বিষয় তুলতে যাচ্ছেন ট্রাম্প

সমাজকাল

প্রকাশ: ২০:৪৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে নতুন শান্তি পরিকল্পনার বিষয় তুলতে যাচ্ছেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে নতুন শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। এটি হবে জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর নেতানিয়াহুর চতুর্থ হোয়াইট হাউস সফর।

ট্রাম্পের নতুন শান্তি প্রস্তাব

ট্রাম্প শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মনে করি আমরা একটি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে।” যদিও নেতানিয়াহু রবিবার জানিয়েছেন, এখনো কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। অন্যদিকে হামাস দাবি করেছে, তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রস্তাব পায়নি।

মার্কিন ও ইসরায়েলি গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী—

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মি মুক্তি পাবে।

জিম্মিদের ফেরত আসার পর ইসরায়েল আজীবন সাজাপ্রাপ্ত শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।

যারা শান্তির প্রতিশ্রুতি দেবে, সেই সব হামাস সদস্যকে ক্ষমা ও গাজা ছাড়ার নিরাপদ পথ দেওয়া হবে। তবে ভবিষ্যতে গাজার রাজনীতিতে তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না এবং সব সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে।

ধাপে ধাপে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী)।

গাজা পরিচালনার জন্য গঠিত হবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন।


এ পরিকল্পনার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। আগে তারা গাজার সব মানুষকে সরিয়ে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত একটি “রিভিয়েরা” বানানোর প্রস্তাব তুলেছিল।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রসঙ্গ ও নেতানিয়াহুর দ্বিধা

পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা স্বীকার করা হয়েছে। সংস্কারের শর্তে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (PA) ভূমিকা রাখার কথাও বলা হয়েছে। এগুলো নেতানিয়াহুর জন্য অগ্রহণযোগ্য লাল দাগ ছিল। গত সপ্তাহে জাতিসংঘে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র মেনে নেওয়া হবে না এবং পিএ-কে “সম্পূর্ণ দুর্নীতিগ্রস্ত” বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ডানপন্থী জোটের অংশীদাররা পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, তার দল কখনোই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বা পিএ-র ভূমিকা মেনে নেবে না। জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরও সতর্ক করে বলেছেন, “হামাসকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত না করে যুদ্ধ শেষ করার কোনো ম্যান্ডেট নেতানিয়াহুর নেই।”

অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেছেন, তিনি শান্তিচুক্তি ও জিম্মি মুক্তির পক্ষে এবং প্রয়োজনে নেতানিয়াহুকে সমর্থন দেবেন।

জনমত ও মার্কিন চাপ

ইসরায়েলে জনমত দ্রুত যুদ্ধবিরতির পক্ষে ঘুরছে। এখনো গাজায় ৪৮ জন জিম্মি আটকে আছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। জিম্মি পরিবারের চাপও বাড়ছে।

অন্যদিকে ট্রাম্প নিজেও নেতানিয়াহুর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে কাতারের ওপর সাম্প্রতিক বিমান হামলায় তিনি বিরক্তি দেখিয়েছেন এবং স্পষ্ট করে বলেছেন, পশ্চিম তীর দখল বা সংযুক্তিকরণ তিনি অনুমোদন করবেন না।

আঞ্চলিক কূটনীতি

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ট্রাম্প সৌদি আরব, মিশর, কাতার ও তুরস্কের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি এটিকে “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক” হিসেবে উল্লেখ করেন। মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আশাবাদ জানিয়েছেন যে, “আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বড় ধরনের অগ্রগতি ঘোষণা করা সম্ভব হবে।”

ট্রাম্প এক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যে ইতিহাসের সেরা শান্তি আনতে যাচ্ছি। সবাই রাজি হয়েছে। আমরা এটি করে দেখাবো।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হন। এর প্রতিশোধে গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ৫৪৯ জন নিহত হয়েছে। আগস্টে জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ চলছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন বলেছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে—যা ইসরায়েল অস্বীকার করেছে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন