মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১৪ আশ্বিন ১৪৩২

বিবিসি হ্যাকে সাংবাদিককে বিপুল অর্থের প্রলোভন

সমাজকাল ডেস্ক 

প্রকাশ: ২০:৪৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২১:৪৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিবিসি হ্যাকে সাংবাদিককে বিপুল অর্থের প্রলোভন

সাইবার অপরাধ এখন আর শুধু তথ্যচুরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তারা সরাসরি ভেতরের মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে ভেতরের দরজা খুলে নেওয়ার কৌশলও নিচ্ছে। বিবিসির সাইবার সংবাদদাতা জো টাইডি নিজেই এমন এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, যা প্রতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে।

টাইডি জানান, চলতি বছরের জুলাই মাসে ‘সিন্ডিকেট’ নামের এক অপরিচিত ব্যক্তি হঠাৎ করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ‘সিগন্যাল’-এ পাঠানো বার্তায় ওই ব্যক্তি দাবি করে, তিনি আন্তর্জাতিক কুখ্যাত র‍্যানসমওয়্যার গ্যাং “মেডুসা”-র সদস্য। প্রস্তাব ছিল স্পষ্ট, “আপনার কম্পিউটারের মাধ্যমে বিবিসি সিস্টেমে প্রবেশাধিকার দিন, আমরা মুক্তিপণ আদায় করব আর আপনি পাবেন অন্তত ১৫-২৫% ভাগ।”

প্রথমে ‘সিন’ নামে পরিচিত ওই হ্যাকার টাইডিকে বোঝায় যে, বিবিসি থেকে লাখো ডলারের মুক্তিপণ আদায় সম্ভব। এমনকি লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে বলে, “আমরা বিবিসির মোট রাজস্বের ১% তুলব, আপনার ভাগে মিলবে এত টাকা যে আর জীবনে কাজ করতে হবে না।”

সাইবার আক্রমণের নেপথ্যে চক্র
মেডুসা নামের এই চক্রটি র‍্যানসমওয়্যার-এজ-আ-সার্ভিস (RaaS) পদ্ধতিতে কাজ করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা ইতিমধ্যেই শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ও যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সফল হামলার উদাহরণও তারা জো টাইডিকে দেখায়।

চাপ সৃষ্টি ও হুমকি
টাইডি প্রথমে খেলা চালিয়ে গেলেও কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নেয়। হ্যাকাররা তাকে ‘MFA Bombing’ পদ্ধতিতে টার্গেট করে—তার ফোনে একের পর এক ভেরিফিকেশন পপ-আপ আসতে থাকে। একবার ভুলে ‘অ্যাকসেপ্ট’ চাপলেই হ্যাকাররা তার বিবিসি অ্যাকাউন্টে ঢুকে পড়তে পারত।

অবশেষে বিবিসি নিরাপত্তা বিভাগ বিষয়টি হাতে নেয় এবং টাইডিকে সাময়িকভাবে বিবিসির সব সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে অতিরিক্ত সুরক্ষা দিয়ে তাকে পুনরায় সংযুক্ত করা হয়।

ভয়ংকর শিক্ষা
ঘটনার পর জো টাইডি বলেন, “একজন সাংবাদিক হিসেবেই আমি দেখলাম কীভাবে একটি চক্র ভেতরের কর্মীকে টার্গেট করে প্রতিষ্ঠানের সাইবার সুরক্ষা ভাঙতে চায়। এটি শুধু সাইবার অপরাধ নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার বিশ্বাস ও নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত।”

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, আগামী দিনে “ইনসাইডার থ্রেট” অর্থাৎ কর্মীদের প্রলোভনে টার্গেট করার প্রবণতা আরও বাড়বে। আর তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য-প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিভাগকে আরও শক্তিশালী নজরদারি চালাতে হবে।

খবর: বিবিসি

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন