আজ কবি শামসুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬:৩৩, ১৭ আগস্ট ২০২৫

আজ কবি শামসুর রহমানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তার কবিতায় স্বাধীনতা, মানবিকতা, প্রতিবাদ, জাগরণ, প্রেম ও দ্রোহ ফোঁটে উঠেছে। বিশেষ করে তিনি বাংলা শব্দের ভেতর দিয়ে স্বাধীনতার অনন্ত প্রবেশপথ নির্মাণ করেছিলেন।
১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন শামসুর রহমান। তখনও ঢাকা ছিল পুরোনো শহরের আলোছায়ায় ভরা এক অন্তরঙ্গ পরিবেশ। শৈশব থেকেই তার চোখে ছিল প্রশ্ন আর মনে ছিল শব্দের প্রতি এক অদম্য আকর্ষণ। কৈশোরে এসে কবিতা তার আত্মপরিচয়ের ভাষা হয়ে ওঠে। তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা তিনি শেষ করতে পারেননি, কিন্তু কবিতার পাঠ তাকে কখনো থামতে দেয়নি। বরং জীবনভর তিনি কবিতার আলোতে মানবজীবনকে অন্বেষণ করে গেছেন।
বাংলা কবিতায় এক বাঁকবদল ঘটিয়েছেন তিনি। তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে, সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ পত্রিকায়। এরপর ১৯৫৭ সালে বের হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’। এই বইয়ের মাধ্যমেই পাঠক বুঝতে পারে, নতুন এক কণ্ঠস্বর এসে গেছে বাংলা কবিতায়, যে কণ্ঠস্বর ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাকে মিলিয়ে এক নতুন কাব্যভূগোল নির্মাণ করছে। শামসুর রহমানের কবিতা কখনও প্রেমময় স্বপ্নে ভরা, আবার কখনও তা হয়ে উঠেছে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অদৃশ্য কুঠার।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তার কবিতা সংগ্রামী চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠে। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘নিজ বাসভূমে’, ‘দুঃসময়ের মুখোমুখি’, ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা’, এসব কবিতা মুক্তিকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎসে পরিণত হয়েছিল। তার কলম মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছে, অন্ধকারে আলো দেখিয়েছে।
শুধু কবি হিসেবেই নয়, শামসুর রহমান ছিলেন সাংবাদিকতার জগতেও এক দীপ্ত কণ্ঠস্বর। দৈনিক বাংলা, বিচিত্রা, উত্তরাধিকারসহ যেখানেই তিনি লিখেছেন, তার কলম সেখানে ছিল বিশ্লেষণধর্মী, গভীর ও সমাজসচেতন। ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত বাংলাদেশ যে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে, সেই সময়েও তার কবিতা নীরব হয়ে থাকেনি। তখনও তিনি ছিলেন দৃঢ় কণ্ঠস্বর। তিনি কবিতাকে ব্যবহার করেছেন সত্য উচ্চারণের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য, সমাজ পরিবর্তনের জন্য।
বাংলা কবিতার ইতিহাসে শামসুর রহমানের নাম অমর হয়ে থাকবে। তিনি বর্ণমালায় আগুন জ্বালাতে পেরেছিলেন, তিনি মানুষের অন্তরে ভালোবাসা জাগাতে পেরেছিলেন, তিনি কবিতার ভেতর দিয়ে স্বাধীনতার ডাক পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন।
জীবদ্দশায় তিনি পেয়েছেন একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা। তবে তার সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি এসেছে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা থেকে। তার কবিতা মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে, জাতীয় চেতনার সঙ্গে একীভূত হয়ে গেছে।