সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

| ১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

রোহিঙ্গাদের ভার আর বহন করতে পারছি না : জাতিসংঘকে বাংলাদেশ 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭:৩৪, ২০ নভেম্বর ২০২৫

রোহিঙ্গাদের ভার আর বহন করতে পারছি না : জাতিসংঘকে বাংলাদেশ 

বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। ছবি: সংগৃহীত

দেশে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার ভার আর বহন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তাদের নিজ দেশে ফেরাতে জরুরি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

বুধবার ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উদ্যোগে আয়োজিত ৮০-তম সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গৃহীত এক প্রস্তাব পরবর্তী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী।

প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য নবায়নকৃত বৈশ্বিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়।

ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথভাবে উত্থাপিত এই প্রস্তাব ১০৫টি দেশ সমর্থন করে।

২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর গৃহীত এই প্রস্তাবে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে বাধা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে রোহিঙ্গাদের অব্যাহত পালিয়ে আসার বিষয়গুলোতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ধারাবাহিক সম্পৃক্ততার আহ্বান জানানো হয়।

বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানালেও গত আট বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো বাস্তব অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে গৃহীত এই বার্ষিক প্রস্তাবে রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করা, মানবিক প্রবেশাধিকারের ওপর বিধিনিষেধ এবং বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অনুপ্রবেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অব্যাহত আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততারও আহ্বান জানানো হয়েছে।’

প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানায়। তবে গত আট বছরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের কোনও বাস্তব অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা নিয়মতান্ত্রিক সহিংসতা, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ব্যাপক নৃশংসতার পর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে তাদের গণবিতাড়িত হওয়ার এ বছর আট বছর পূর্ণ হয়েছে। প্রতি বছর ক্যাম্পের জনসংখ্যা ৩০ হাজার করে বৃদ্ধি পায়। এরপর নতুন করে সহিংসতার কারণে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। রোহিঙ্গাদের মোট সংখ্যা এখন ১৩ লাখ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কোনো অর্থবহ অগ্রগতি হয়নি এবং একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেনি। তাই এই রেজোলিউশন আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এবারের আলোচনায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও আরাকান সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির স্বীকৃতি দেয়। এতে ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা, মানবিক সহায়তা বাধা এবং লাখ লাখ মানুষকে বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রস্তাবে অবিলম্বে সহিংসতার অবসান, অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, অপরাধীদের জন্য জবাবদিহিতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য নিরন্তর মানবিক সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অসহযোগিতার কারণে আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যে অগ্রগতির অভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রেজুলেশনে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে পর্যায়ক্রমিক উচ্চ পর্যায়ের সংলাপসহ নতুন করে প্রচেষ্টার পাশাপাশি আস্থা সৃষ্টির পদক্ষেপ হিসেবে রাখাইনে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক মানবিক সংগঠনগুলোর উপস্থিতির জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ একাধিক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নতুন আগতদের কারণে কক্সবাজারের ইতোমধ্যে জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলো আরও ভিড় করে তুলেছে। আমরা আর বোঝা বহন করতে পারছি না। তদুপরি, পরিস্থিতি মানবপাচার এবং অন্যান্য আন্তঃদেশীয় অপরাধের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তাই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার স্বার্থে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় রাখাইনে যুক্তিসঙ্গত স্থিতিশীলতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন অপরিহার্য।’

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

‘আর.ভি ড. ফ্রিডটজফ নানসেন’ জরিপ; বঙ্গোপসাগরে ৬৫ নতুন প্রজাতির মাছ, বাংলাদেশ অংশেই ৫ প্রজাতি
অবৈধ আহরণে সমুদ্রে কমে যাচ্ছে মাছ: ফরিদা আখতার
খালেদা জিয়ার সুস্থতায় ঢাবিতে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল
বিএনপির হাতেই দেশের সার্বভৌমত্ব: মির্জা আব্বাস
১৭০ আসনে জেএসডির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ: দেখে নিন প্রার্থী কারা
ছাদে দুই কিশোর, বন্ধ মেট্রোরেল চলাচল
সরকারি প্লট বরাদ্দ দুর্নীতি মামলা : শেখ হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলার রায় সোমবার
হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিলো: তদন্ত কমিশন
নারায়ণগঞ্জে বাউলদের সমাবেশ মঞ্চের ফেস্টুন ছিঁড়ল যুবক, আটক
তারেক রহমান ঢাকায় না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এটা ঠিক না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সীমান্ত হত্যার সমাধান আপাতত দেখছি না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের
বিজয়ের মাসজুড়ে শিল্পকলায় যাত্রাপালা প্রদর্শনী, ৩১ টি দল থাকবে
কামালকে প্রত্যর্পণের তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেই: উপদেষ্টা
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত,
সচিবালয়ের আগুন নিভেছে
ফিরতে চাইলে তারেক রহমানকে ওয়ান-টাইম পাস দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
খুলনায় আদালত চত্বরে গুলিতে নিহত ২
১ ডিসেম্বর থেকে রাত্রে থাকা যাবে সেন্টমার্টিনে
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় রাশিয়ার শুভেচ্ছা–বার্তা