মেক্সিকোর বাদুড় মানব
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬:৩৯, ১৬ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৭:১৮, ১৬ আগস্ট ২০২৫

অশুভ নয়, প্রকৃতির অভিভাবক
বিশ্বজুড়ে রয়েছে প্রায় ১,৪০০ প্রজাতির বাদুড়। তবু এরা আজ অবধি ভুল বোঝাবুঝির শিকার। কখনো লোককথায় ভ্যাম্পায়ার, কখনো আবার রোগের উৎস হিসেবে কলঙ্কিত। অথচ এই উড়ন্ত স্তন্যপায়ীরাই আমাদের প্রকৃতি ও কৃষিকে বাঁচিয়ে রেখেছে অজান্তে।
রদ্রিগো মেদেলিন: জীবনের প্রতিজ্ঞা
মাত্র ১৩ বছর বয়সে হাতে প্রথম বাদুড় ধরে জীবন পাল্টে যায় মেক্সিকান পরিবেশবিদ রদ্রিগো মেদেলিনের। তখন থেকেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন বাদুড় রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করবেন। এখন তিনি ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর পরিবেশবিদ্যার জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী এবং Latin American Network for Bat Conservation-এর প্রতিষ্ঠাতা।
তিনি বলেন,“অন্ধকার গুহায় বাদুড়ের ডাক আমার কাছে শান্তির সুর। আমি সেই অনুভূতিই মানুষকে বোঝাতে চাই।”
বাদুড়ের বিস্ময়
- একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যারা প্রকৃত অর্থে উড়তে পারে।
- ইকোলোকেশন প্রযুক্তি দিয়ে অন্ধকারেও শিকার ধরে।
- কিছু প্রজাতি ৩০ বছরের বেশি বাঁচে, কিন্তু বছরে মাত্র একটি শাবক জন্ম দেওয়ায় সংখ্যা দ্রুত বাড়ে না।
- বিশ্বে মোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রায় পাঁচভাগই বাদুড়।
সংস্কৃতির বৈপরীত্য
পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বাদুড় অশুভ, অন্ধকার ও শয়তানের প্রতীক। কিন্তু পূর্বে, বিশেষত চীনা সংস্কৃতিতে বাদুড়কে সৌভাগ্য ও সুখের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে আবারও এ প্রাণীদের প্রতি ঘৃণা বেড়েছে। অথচ মেদেলিনের মতে—
“বাদুড় বিড়াল-কুকুরের চেয়ে বেশি রোগ বহন করে না। ভয়টা নিছক অতিরঞ্জিত।”
প্রকৃতির জন্য অপরিহার্য
পোকা দমনকারী: মেক্সিকোর উত্তর সীমান্তে এক প্রজাতির প্রায় ৩ কোটি বাদুড় প্রতিরাতে ৩০০ টন পোকা খেয়ে ফেলে।
বন পুনর্জন্মের কারিগর: ফলভুক বাদুড় বীজ দূরে ছড়িয়ে বন গড়ে তোলে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।
পরাগায়নে ভূমিকা: আগাভে গাছের পরাগায়ন বাদুড় ছাড়া অসম্ভব। এই আগাভে দিয়েই তৈরি হয় বিশ্ববিখ্যাত টেকিলা।
হুমকির মুখে বাদুড়
- মানুষের কর্মকাণ্ডই আজ বাদুড়কে বিপন্ন করে তুলেছে—
- আবাসস্থল ধ্বংস
- কীটনাশকের ব্যবহার
- উইন্ড টারবাইনের আঘাত
- মারাত্মক ফাঙ্গাল রোগ white nose syndrome
- ফলে বহু প্রজাতি আজ বিলুপ্তপ্রায় তালিকায়।
মানুষের প্রতি বার্তা : মেদেলিন সতর্ক করে বলেন,“এক রাতে বাদুড় হারিয়ে গেলে ফসল ধ্বংস হবে, মশার উপদ্রব বাড়বে, আমাদের জীবনধারা বদলে যাবে।”
তার উদ্যোগের মধ্যে আছে bat-friendly agave farming, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক, আর মাইগ্রেশন ট্র্যাকিং প্রোগ্রাম। তাঁর বিশ্বাস—তথ্য, ছবি আর প্রমাণ দেখালে মানুষ বাদুড়কে ভালোবাসবেই।
শেষে তার অনুরোধ—“যদি এখনো বাদুড়কে ভয় পান, একটু জানুন। তারা একদিন আপনার হৃদয় জয় করবে।”