তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে শুরু ও বাতিল হয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৫০, ২০ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১২:৩২, ২০ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এটি শুধুমাত্র প্রশাসনিক কাঠামোর প্রশ্ন নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও নির্বাচনের স্বচ্ছতার প্রতিফলনও।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা জন্ম নেয় এক বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে অনানুষ্ঠানিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকলেও, ১৯৯৪ সালের মাগুরা উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়—এ অভিযোগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো তীব্র আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের ফলস্বরূপ ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়। সংবিধানে বলা হয়, নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবে।
এই ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। উভয় নির্বাচনেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হয়েছিল।
২০০৬ সালের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কাঠামো নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র বিরোধ তৈরি হয়। ২০০৬ সালে অচলাবস্থার কারণে জরুরি অবস্থা জারি করা হয় এবং সেনা-সমর্থিত বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে, যা পরবর্তীতে ১/১১ সরকার নামে পরিচিত। এই সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থেকে নিজেদের সাংবিধানিক এখতিয়ার অতিক্রম করে কাজ করে।
পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে রায় দেন যে ত্রয়োদশ সংশোধনী অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এরপর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়।
