জাপানের ৭০ লাখ মানুষ ডিমেনশিয়ায় ভূগছেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯:১০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
জাপান ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দেশটির প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। শুধু গত বছরই প্রায় ১৮ হাজার প্রবীণ ব্যক্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে গেছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৫০০ জন পরে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন। ২০১২ সালের তুলনায় হারিয়ে যাওয়ার এসব ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে।
একদিকে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমছে—বিদেশি কর্মী নিতেও কঠোর নিয়ম। ফলে প্রবীণদের পরিচর্যা জাপানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ডিমেনশিয়া-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ও সামাজিক ব্যয় দাঁড়াবে ১৪ ট্রিলিয়ন ইয়েন—যা ২০২৫ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
আজ রবিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে পুরো তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জাপান সরকার এখন প্রযুক্তিনির্ভর সমাধানের দিকে ঝুঁকছে।
দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ডিমেনশিয়া রোগীদের বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়ানো ঠেকাতে জিপিএস-ভিত্তিক সিস্টেম জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।অনেক স্থানীয় প্রশাসন পরিধানযোগ্য জিপিএস ট্যাগ ব্যবহার করছে, যা নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়লে সঙ্গে সঙ্গে সতর্কবার্তা পাঠায়।
কিছু শহরে কনভেনিয়েন্স স্টোর কর্মীরাও রিয়েল-টাইম নোটিফিকেশন পান, ফলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হারিয়ে যাওয়া প্রবীণকে খুঁজে পাওয়া যায়।এটি এক ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে, যেখানে প্রযুক্তি ও কমিউনিটি—উভয়ই রোগীর পাশে দাঁড়ায়।
এআই দিয়ে ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করা হচ্ছে। ফুজিৎসুর নতুন প্রযুক্তি এআইগেইট—হাঁটার ভঙ্গি, সোজা দাঁড়ানো, ঘুরে দাঁড়ানোর গতি—এসব বিশ্লেষণ করে ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে।
এআই-চালিত এই মডেলটি রোগীর শরীরের ‘স্কেলেটাল আউটলাইন’ তৈরি করে, যা চিকিৎসকেরা সহজেই পর্যালোচনা করতে পারেন।
ফুজিৎসুর মুখপাত্র হিদেনোরি ফুজিওয়ারা বলেন,“বয়সসংশ্লিষ্ট রোগ দ্রুত শনাক্ত করা গেলে সঠিক সময়ে হস্তক্ষেপ সম্ভব হয়—রোগীরা দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকতে পারেন।”
টোকিওর ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা তৈরি করছেন এআইরেক, ১৫০ কেজির এক মানবসদৃশ রোবট। এটি—মোজা পরিয়ে দিতে, ভাজাপোড়া রান্না করতে কাপড় ভাঁজ করতে সহায়তা করতে পারে। ভবিষ্যতে রোবটটি ডায়াপার বদলানো বা বেডসোর প্রতিরোধেও কাজ করতে পারবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।
যদিও প্রযুক্তিটি উন্নত হচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের মানসিকতা, স্পর্শ বা পরিস্থিতি বুঝে কাজ করা—এগুলোর জন্য আরও অন্তত ৫ বছর সময় লাগবে।
ওয়াসেদার সহকারী অধ্যাপক তামোন মিয়াকে বলেন,“রোবট মানুষের জায়গা নিতে আসেনি। কেয়ারগিভার ও রোগী উভয়কে সহায়তা করাই এর উদ্দেশ্য।”
ভালোবাসা ও সঙ্গ দেওয়ার রোবট শার্প তৈরি করেছে ‘পকেতোমো’।মাত্র ১২ সেন্টিমিটার উচ্চতার এক ছোট রোবট—সময়মতো ওষুধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়, আবহাওয়ার আপডেট দেয়, একাকী মানুষের সঙ্গে কথাও বলে। প্রবীণদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কমানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এটি।
কোম্পানির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার মিহো কাগেই বলেন,“আমরা সমাজের সমস্যাগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে কমাতে চাই।”
রোবট যত উন্নতই হোক, মানুষের উপস্থিতি অপরিবর্তনীয় — এর এক উজ্জ্বল উদাহরণ টোকিওর ‘রেস্টুরেন্ট অব মিস্টেকেন অর্ডার্স’।এ রেস্তোরাঁয় ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ওয়েটার হিসেবে কাজ করেন।
ওয়েটার তোশিও মরিতা টেবিল লুটিয়ে না ফেলতে ফুলকে চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করেন।ভুল-ভ্রান্তিসহ এই পরিবেশনই অতিথিদের কাছে ভালোবাসার প্রতীক—এখানে ভুলের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানবিকতা।
তার স্ত্রী বলেন, এই রেস্তোরাঁ স্বামীর জন্য যেমন আনন্দ, তেমনি তার নিজের জন্যও একটি বিরল বিশ্রাম।
মরিতার সহজ স্বীকারোক্তি—“সত্যি বলতে কী, আমি একটু পকেটমানি চাই। আর মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। প্রত্যেকে আলাদা, এটাই সবচেয়ে মজার।”
