ভারতকে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি রাশিয়ার
যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও উচ্চশুল্কের মধ্যেও তেল-গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখবে মস্কো; প্রতিরক্ষা–বাণিজ্যেও জোরালো নতুন সমঝোতা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:৪১, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ভারতকে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি রাশিয়ার। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জ্বালানি চাহিদা পূরণে রাশিয়া নিরবচ্ছিন্ন তেল, গ্যাস ও কয়লা সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে পুতিন বলেন,“ভারতের জ্বালানি উন্নয়নের জন্য যা কিছু দরকার—রাশিয়া তা নির্ভরযোগ্যভাবে সরবরাহ করতে প্রস্তুত।”
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটাই পুতিনের প্রথম ভারত সফর। তাকে দেয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা, গার্ড অব অনার এবং ২১ তোপের সালামি। মোদি পুতিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন,“জ্বালানি নিরাপত্তা ভারত–রাশিয়া অংশীদারত্বের শক্তিশালী স্তম্ভ।”তবে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে তিনি তেলের প্রসঙ্গ সরাসরি উল্লেখ করেননি।
২০২৪ সালে ভারতের মোট অশোধিত তেল আমদানির ৩৬ শতাংশই এসেছে রাশিয়া থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে চাপের মুখে আমদানি কিছুটা কমালেও রুশ জ্বালানি দিল্লির অর্থনীতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এখনও প্রধান ভূমিকা রাখছে।
বৈঠকে পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে মোদিকে ‘বিস্তারিত ব্রিফিং’ দেন। মোদি পুনর্ব্যক্ত করেন—“ভারত সবসময় শান্তির পক্ষে, যুদ্ধের নয়।”রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় এর বৈশ্বিক প্রভাব নিয়েও দুই নেতা মতবিনিময় করেন।
২০২৪–২৫ অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলার, যা মহামারির আগের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ। তবে এর মধ্যে ভারতের রফতানি মাত্র ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার, যা বাণিজ্য ঘাটতি বাড়াচ্ছে।
দুই নেতা ২০৩০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক সহযোগিতা কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। চাকরি, স্বাস্থ্য, শিপিং, রাসায়নিক খাতসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হয়।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। যদিও ২০১৯–২৩ সময়ে অস্ত্র আমদানিতে রাশিয়ার অংশ কমে ৩৬ শতাংশে নেমেছে। তবু শীর্ষ বৈঠকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান উন্নয়ন, পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্প নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
রাষ্ট্রীয় ভোজে যোগ দেওয়ার পর শুক্রবার রাতেই ভারত ত্যাগ করার কথা রুশ প্রেসিডেন্টের। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা এই সফরের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হলো।
