আজ ভারত যাচ্ছেন পুতিন দিল্লিতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬:৩৮, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরকে কেন্দ্র করে রাজধানী নয়াদিল্লিতে গড়ে তোলা হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয়। তার বিমানে অবতরন থেকে প্রতিটি মিনিট নজরদারির আওতায় রাখার জন্য ইতিমধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের বিশেষ কমান্ডো দল, ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি), স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ (এসপিজি), বিশেষ স্নাইপার ইউনিট, ড্রোন স্কোয়াড ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর নজরদারি ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এই সফরেই দু’দেশ বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, কৃষি, মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে সই করবে বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর। একই সঙ্গে ভারত–রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্বের ২৫ বছর পূর্তি ও ২৩তম দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হবে।
নিরাপত্তায় পাঁচস্তরের বলয়—ড্রোন, AI নজরদারি, স্নাইপার প্রস্তুত
পুতিনের সফরকে কেন্দ্র করে দিল্লিতে যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, তা সাম্প্রতিক সময়ে কোনো রাষ্ট্রনায়কের সফরে দেখা যায়নি বলে দাবি নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।
প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—রুশ প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের উচ্চ প্রশিক্ষিত কমান্ডো, এনএসজি ও দিল্লি পুলিশের বিশেষ ইউনিট, কনভয়–রুটে দীর্ঘ প্রস্তুতিমূলক রিহার্সাল, উন্নতমানের জ্যামার, সিগন্যাল ব্লকার, ড্রোন–নজরদারি ও অ্যান্টি–ড্রোন সিস্টেম, এআই–ভিত্তিক ফেস রিকগনিশন মনিটরিং সিস্টেম, শহরের উচ্চভবনে অভিজ্ঞ স্নাইপার মোতায়েন।
রাশিয়া থেকে অন্তত ৪০+ বিশেষজ্ঞ নিরাপত্তা কর্মকর্তা আগেই দিল্লিতে পৌঁছে প্রতিটি রুট ও ভবনের নিরাপত্তা বারবার পরীক্ষা করেছেন। একটি পৃথক কন্ট্রোল রুমে বসে পুরো সফরজুড়ে কনভয়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এসপিজি যুক্ত থাকবে বিশেষ মুহূর্তে
যখন পুতিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে থাকবেন, তখন এসপিজি রুশ নিরাপত্তা দলের সঙ্গে মিলে অভ্যন্তরীণ বলয়ের দায়িত্ব নেবে। এটাই হবে সফরের সবচেয়ে সুরক্ষিত পর্ব।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ব্রহ্মোস–এনজি নিয়ে বড় অগ্রগতির সম্ভাবনা
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আলোচনার তালিকায় এবার বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ব্রহ্মোস–এনজি প্রকল্প।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন ‘সিঁদুর’-এ ব্রহ্মোসের সফল প্রয়োগ। আরও হালকা ও বহুমুখী সংস্করণের প্রয়োজনীয়তা। ৪০০ কিলোমিটারের বেশি পাল্লার নতুন সংস্করণ নিয়ে আলোচনা। ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানে দ্রুত সংযুক্তির পরিকল্পনা।
এ ছাড়া শক্তি, বাণিজ্য, খাদ্যনিরাপত্তা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে যৌথ উদ্যোগের প্রসঙ্গও আলোচনায় আসবে।
সূত্র মতে, কমপক্ষে পাঁচটি খাতকে কেন্দ্র করে চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে—বাণিজ্য সম্প্রসারণ (রুপি–রুবল লেনদেনসহ নতুন বাণিজ্য কাঠামো), স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা গবেষণা সহযোগিতা, কৃষিতে প্রযুক্তি ও বীজ উন্নয়ন বিনিময়, সংস্কৃতি ও মিডিয়া সহযোগিতা, কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন রোডম্যাপ।
এই সফর দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের একটি পরবর্তী অধ্যায় বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
পুতিনের ব্যস্ত কর্মসূচি: নৈশভোজ, রাষ্ট্রপতি ভবন, রাজঘাট
৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দিল্লিতে পৌঁছে পুতিন প্রথমেই যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আয়োজন করা ব্যক্তিগত নৈশভোজে।
পরদিন তার কর্মসূচি—রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনার, মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধ রাজঘাটে শ্রদ্ধা, হায়দরাবাদ হাউসে মোদি–পুতিন শীর্ষ বৈঠক, ভারত মণ্ডপমে বিশেষ ইভেন্ট, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দেওয়া নৈশভোজে অংশগ্রহণ।
এই সফর পুতিনের প্রথম ভারত সফর ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে—যা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
