মোদির সঙ্গে দিল্লি বৈঠক: ভারতের কাছে কী চাইছে রাশিয়া?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:৩৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসন্ন নয়াদিল্লি সফরকে সামনে রেখে ভারতের প্রতি মস্কোর প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ কৌশলের স্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরেছেন। মস্কোর ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিশেষ করে ভারত থেকে রাশিয়ার আমদানি বাড়ানো—এটাই হবে আলোচনার প্রধান লক্ষ্য।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, দুই দেশের বাণিজ্যে যে “অসমতা” তৈরি হয়েছে, তা এখন কৌশলগতভাবে অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে।
ভারত প্রতি বছর রাশিয়া থেকে আমদানি করছে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া ভারতের কাছ থেকে কিনছে মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার।
পেসকভের বলেন, “আমরা ভারতের কাছ থেকে আরও বেশি পণ্য কিনতে চাই। বাণিজ্যিক সমতা আনা এখন জরুরি।”
এই মন্তব্যে স্পষ্ট—দিল্লির সঙ্গে বাণিজ্যকে টেকসই করতে রাশিয়া এখন ভারতের পণ্যে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
রাশিয়া চাইছে দু’দেশের বাণিজ্যকে মার্কিন চাপ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখার জন্য নিজস্ব মুদ্রা লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে।
রুপি–রুবল বা উভয় দেশের জাতীয় মুদ্রায় সরাসরি লেনদেন নিয়েও আলোচনা থাকবে।
পুতিন সরাসরি বলেছেন—“পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা আমাদের নতুন নয়। আমরা চাপ মোকাবিলার অভিজ্ঞ।”
ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতকে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাধিক ক্ষেত্রে চাপ দিচ্ছে তা জানিয়ে মস্কো বার্তা দিয়েছে—ভারতের ভূ-রাজনৈতিক দোটানা তারা বুঝতে পারে।
রাশিয়া ভারতের কাছে কী চাইছে? বড় ইঙ্গিতগুলো
ভারতীয় পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি, মুদ্রা লেনদেন কাঠামো তৈরি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রাখা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করা, ব্রাহ্মোসের যৌথ উৎপাদন সম্প্রসারণ, এসইউ-৫৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে আলোচনা অতিরিক্ত এস-৪০০ সরবরাহ এবং ছোট মডুলার নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর প্রযুক্তি হস্তান্তর।
পেসকভ যোগ করেছেন—রাশিয়া এসব প্রযুক্তি ভারতকে দিতে “সম্পূর্ণ প্রস্তুত”।
পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোকে “যুদ্ধমুখী নীতি” অনুসরণ করার অভিযোগে পেসকভ বলেন—“ইউরোপ যদি যুদ্ধ চায়, আমরা প্রস্তুত।”
কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে তার বার্তা ছিল শান্ত ও সহযোগিতামূলক— “ভারত যতদূর যেতে চাইবে, রাশিয়া ততদূর যেতে প্রস্তুত।”
এতে পরিষ্কার—মস্কো ভারতের সঙ্গে চীনের সমতুল্য গভীর অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী।
রাশিয়া বলেছে, তারা দুই দেশকেই সমানভাবে মূল্য দেয় এবং চায় সব সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হোক।
ভারতের প্রতি এই বার্তা এমন মুহূর্তে এল যখন লাদাখে উত্তেজনা এখনও পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হলেও রাশিয়ার দাবি—ভারতকে তেল সরবরাহ বজায় রাখার উপায় তারা খুঁজে পাচ্ছে, দামে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতেও চেষ্টা চলছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন শান্তি উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন পুতিন।তিনি জানান—ভারতের মধ্যস্থতামূলক প্রচেষ্টাকে মস্কো “গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে”।সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
