পুতিন–যুক্তরাষ্ট্র পাঁচ ঘণ্টার শান্তি আলোচনা অগ্রগতি ছাড়াই শেষ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:১৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনৈতিক দল ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রায় পাঁচ ঘণ্টার বৈঠক শেষ হলো কোনো ব্রেকথ্রু ছাড়াই। রুশ প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, আলোচনা “খুবই গঠনমূলক ও গভীর” হলেও ‘সমঝোতার উপযোগী কোনো চূড়ান্ত প্রস্তাব মেলেনি’।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ক্রেমলিনে বসা এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং হোয়াইট হাউসের গুরুত্বপূর্ণ অনানুষ্ঠানিক আলোচক জ্যারেড কুশনার রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টানা কয়েক ঘণ্টা আলোচনা করেন। ধারণা করা হচ্ছিল, গত এক সপ্তাহের নিবিড় কূটনৈতিক তৎপরতার পর এই বৈঠকেই ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো বড় অগ্রগতি হতে পারে।
কিন্তু বৈঠক শেষে উশাকভ বলেন—“আমেরিকানদের কিছু প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে, কিছু আবার রাশিয়ার জন্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আলোচনার কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে।”
রাশিয়া এখনো তাদের পূর্বের দুই প্রধান দাবি থেকে সরে আসেনি। দাবি দুটো হলো-ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ ও দনবাসের দখলকৃত-ঘোষিত অঞ্চলসমূহের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ স্বীকৃতি।
এই দুটি বিষয়কে ক্রেমলিন ‘লাল দাগ’ বলে বিবেচনা করেছে, যা সমাধান ছাড়া কোনো শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা দেখছে না মস্কো।
অন্যদিকে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো এ দাবিগুলোকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
হোয়াইট হাউস বৈঠকের আগেই জানিয়েছিল, তারা আলোচনার ফল নিয়ে “খুবই আশাবাদী”। কিন্তু আপাতত তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। সিএনএন বিশ্লেষকদের মতে, মস্কো–ওয়াশিংটন এখনো শুরুতেই আটকে আছে, বিশেষ করে ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা কাঠামো নিয়ে চরম অবস্থানগত দূরত্বের কারণে।
পুতিন–ট্রাম্প সরাসরি বৈঠকের বিষয়ে উশাকভ জানান, “এমন বৈঠক নির্ভর করবে আলোচনায় কতটা অগ্রগতি পাওয়া যায় তার ওপর।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, আলোচনার ফল নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি “সরাসরি সিগনাল” আশা করছেন। তিনি বলেছেন— “যদি মার্কিন পক্ষ থেকে ইতিবাচক সংকেত আসে, তবে উচ্চপর্যায়ের ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল আলোচনায় যুক্ত হবে।”
বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে পুতিন বলেন—রাশিয়ার ইউরোপে যুদ্ধ করার ইচ্ছে নেই,তবে “ইউরোপ যুদ্ধ শুরু করলে রাশিয়া প্রস্তুত।”
তিনি অভিযোগ করেন, ইউরোপীয় নেতারা মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে “অগ্রহণযোগ্য শর্ত” সামনে রেখে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করছেন।
গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন যে ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা দিয়েছিল, সেটি ইউক্রেন ও ইউরোপ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিল। পরে জেনেভায় মার্কিন–ইউক্রেন বৈঠকের পর খসড়ায় পরিবর্তন আনা হয়, যা কিছুটা গ্রহণযোগ্য হয় কিয়েভের কাছে। কিন্তু রাশিয়া এখনো বলে আসছে— “যুদ্ধের মূল কারণগুলো—ন্যাটো বিস্তার বন্ধ, দখলকৃত অঞ্চলের স্বীকৃতি—অমীমাংসিত থাকলে শান্তি সম্ভব নয়।”
একজন জ্যেষ্ঠ ন্যাটো কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন,
মস্কোর কাছ থেকে “বাস্তবধর্মী কোনো ছাড়” দেখার ইঙ্গিত নেই। বরং রাশিয়া ইউক্রেনের সামরিক ক্ষমতা দুর্বল রাখতেই চায়।
রুশ সংবাদ সংস্থা তাস-এর ফুটেজে দেখা গেছে, আলোচনার আগে কুশনার ও উইটকফকে মস্কোর রেড স্কোয়ারে হাঁটতে। পরে তারা ক্রেমলিন প্রতিনিধি কিরিল দিমিত্রিয়েভকে সঙ্গে নিয়ে মিশেলিন-তারকা রেস্তোরাঁয় ক্যাভিয়ার, কোয়েল, ভেনিসন ও কাঁকড়া দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ করেন।
মস্কোর এই বৈঠক ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনায় নতুন মাত্রা যুক্ত করলেও প্রধান অচলাবস্থার সমাধান হয়নি। উভয় পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে—তবে ইউক্রেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য যেখানে একটি ন্যায্য যুদ্ধবিরতি, সেখানে রাশিয়ার ‘মূল কারণ সমাধানের’ দাবিগুলো শান্তি প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলছে।
পরবর্তী আলোচনাই এখন সিদ্ধান্ত নেবে—এটি কি শান্তির পথে অগ্রগতি, নাকি আরও একটি ব্যর্থ উদ্যোগ।
