যৌন নিপীড়নের ভিডিও বানাতে দক্ষিণ কোরিয়ায় লক্ষাধিক আইপি ক্যামেরা হ্যাক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৫৩, ২ ডিসেম্বর ২০২৫
দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ সাইবার অপরাধের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ‘যৌন নিপীড়ন’ বিষয়ক ভিডিও তৈরির উদ্দেশ্যে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) ক্যামেরা হ্যাক হয়েছে—এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে দেশটির জাতীয় পুলিশ সংস্থা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্তরা ঘরোয়া নিরাপত্তা ক্যামেরার দুর্বল পাসওয়ার্ড ও অপর্যাপ্ত সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার ডিভাইসে অনধিকার প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
আইপি ক্যামেরা সাধারণত ব্যক্তিগত বাড়ি, কারাওকে রুম, পিলাটিস স্টুডিও, শিশু বা পোষা প্রাণী পর্যবেক্ষণ কিংবা ব্যবসায়িক স্থাপনায় ব্যবহৃত হয়। এসব ক্যামেরার ভিডিও ক্লাউড বা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেখা যায়—যা দুর্বল সুরক্ষাব্যবস্থার কারণে হ্যাকারদের সহজ টার্গেটে পরিণত হয়।
তদন্তে উঠে এসেছে, হ্যাক হওয়া ক্যামেরার মধ্যে ব্যক্তিগত বাসা, কারাওকে রুম, পিলাটিস স্টুডিও এমনকি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের ক্লিনিকও রয়েছে—যা ভয়াবহ গোপনীয়তা লঙ্ঘনের উদাহরণ তৈরি করেছে।
গ্রেফতার চারজন একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না রাখলেও তাদের কর্মকাণ্ডের ভয়াবহতা পুলিশকে হতবাক করেছে।
এক সন্দেহভাজন ৬৩ হাজার ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ৫৪৫টি যৌন নিপীড়নমূলক ভিডিও তৈরি করেন।
এগুলো তিনি ১২ হাজার ২৩৫ ডলারের সমপরিমাণ ভার্চুয়াল সম্পদে বিক্রি করেন।
অন্যজন ৭০ হাজার ক্যামেরায় অ্যাক্সেস নিয়ে ৬৪৮টি ভিডিও তৈরি করেন এবং ১ কোটি ৮০ লাখ ওন (কোরিয়ান মুদ্রা) আয় করেন।
গত এক বছরে যে বিদেশি ওয়েবসাইটে এসব ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে, তার ৬২ শতাংশ কনটেন্টই তৈরি করেছে এই দুই ব্যক্তি। পুলিশ সেই সাইটটি ইতোমধ্যে বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালনাকারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
অতিরিক্তভাবে, সেই প্ল্যাটফর্ম থেকে ভিডিও কিনেছে বা দেখেছে—এমন সন্দেহে আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পুলিশ সংস্থার সাইবার তদন্ত শাখার প্রধান পার্ক উ-হিউন বলেন—
“আইপি ক্যামেরা হ্যাকিং ও অবৈধ চিত্রায়ন ভুক্তভোগীদের জন্য ভয়াবহ মানসিক দুর্ভোগ তৈরি করে। এটি গুরুতর অপরাধ। কঠোর তদন্তের মাধ্যমে আমরা এ ধরনের অপরাধ নির্মূল করবো।”
তিনি আরও সতর্ক করেন—“অবৈধভাবে ধারণ করা ভিডিও দেখা বা নিজের কাছে রাখাও গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধচক্রে যারা জড়িত, প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে।”
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন—দুর্বল পাসওয়ার্ড, আপডেট না থাকা সফটওয়্যার, এনক্রিপশনবিহীন নেটওয়ার্ক সংযোগ। এসব কারণে সস্তা বা মাঝারি মূল্যের আইপি ক্যামেরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, দুই-স্তরের নিরাপত্তা, ডিভাইস আপডেট এবং নিজস্ব নেটওয়ার্ক সুরক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন।
