ইমরান খান ‘সুস্থ’, নাকি গোপন করা হচ্ছে ‘সত্য’: কাটছে না ধোঁয়াশা 

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জীবিত আছেন কিনা- এমন প্রশ্ন তুলেছেন তার পরিবার ও দল। টানা ৮৪৫ দিন কারাবন্দি থাকার পর এখন তার জীবন নিয়ে `গুরুতর আশঙ্কা’ প্রকাশ করেছেন ছেলে কাসিম খান। তার অভিযোগ, গত ছয় সপ্তাহ ধরে একটি ডেথ সেলে এক বন্দি অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে তার বাবাকে। সে ও তার ভাইসহ পরিবারের কেউই তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারছে না।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাত স্থানীয় সময় রাত দুইটার দিকে ইমরান খানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই অভিযোগ করেন ছেলে কাসিম খান। 

একদিকে পরিবার, পিটিআই ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইমরানের জীবিত থাকার প্রমাণ ও সাক্ষাতের অনুমতি দ্রুত প্রকাশের দাবি জানাচ্ছে।

অন্যদিকে সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক গুজব বলেই উড়িয়ে দিচ্ছে।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সত্যিই কি সুস্থ আছেন? নাকি সত্য গোপন করা হচ্ছে? এ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। 

৬ সপ্তাহ ডেথ সেলে ফেলে রাখা হয়েছে

ফেসবুকে ইমরান খানের ছেলে কাসিম খান তার বাবার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রত্যেক গণতান্ত্রিক কণ্ঠকে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানান।

তিনি “জীবন যাচাইয়ের দাবি, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী প্রবেশ নিশ্চিত করা, এই অমানবিক বিচ্ছিন্নতা বন্ধ করা এবং পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা যারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে আটক হয়েছে তাদের মুক্তি দাবি করেন।”

“বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি ইমরান খানের ছেলে কাসিম খানের বার্তা” শীর্ষক ওই পোস্টে ছেলে কাসিম খান অভিযোগ করেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অবৈধ আটকের ৮৪৫ দিন সম্পন্ন, তিনি ২৪ দিন ধরে নির্জন কারাগারে এবং পরিবার, আইনজীবী ও দলের সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

কাসিম খান ফেসবুকে লেখেন, "আমার বাবাকে গ্রেফতার করার ৮৪৫ দিন হয়ে গেছে। গত ছয় সপ্তাহ ধরে তাকে সম্পূর্ণ অজ্ঞতার পরিবেশে একটি ডেথ সেলে একা ফেলে রাখা হয়েছে। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও তার বোনকে সব মিটিং থেকে বিরত রাখা হয়েছে। ফোন নেই, দেখা নেই, জীবনের খবর নেই। আমি আর আমার ভাই আমার বাবার সাথে কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে পারিনি।“

“এই সম্পূর্ণ অন্ধকার একটি নিরাপত্তা প্রোটোকলের অংশ নয়। এটা তাদের অবস্থা লুকানোর এবং আমাদের পরিবার নিরাপদ কিনা তা জানার থেকে বিরত রাখার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা।”

“এটা স্পষ্ট করা যাক যে, আমার বাবার নিরাপত্তা এবং এই অমানবিক বিচ্ছিন্নতার প্রতিটি ফলাফলের জন্য পাকিস্তান সরকার এবং তার কর্তাদের আইনী, নৈতিক ও আন্তর্জাতিক স্তরে সম্পূর্ণ দায়িত্ব বহন করতে হবে।”

‘পাকিস্তানে ভয়াবহ সেন্সরশিপ চলছে’

ইমরান খানের বোন নুরিন নিয়াজি আরও কঠোর ভাষায় পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা ‘এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল’কে (এএনআই) তিনি বলেন, পাকিস্তানে এমন পর্যায়ের সেন্সরশিপ চলছে যে সাংবাদিকরাও কথা বলতে পারছেন না। তার দাবি, অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন, তাদের পাসপোর্ট ও সম্পদ আটকে দেওয়া হচ্ছে।

নুরিনের ভাষায়, “হিটলারের সময়ের কথা পড়েছি… পাকিস্তানে এখন সেই পরিস্থিতি চলছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, শাহবাজ শরিফ সরকার “অজনপ্রিয়” ও “কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা”, তাই দমননীতি ছাড়া টিকে থাকতে পারছে না।

পিটিআই বলছে—‘২.৫ কোটির প্রতিনিধিকে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না’

খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদি টানা অষ্টমবার ইমরানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ২৭ নভেম্বর আদিয়ালা জেলের বাইরে অবস্থান নিলে পুলিশ তাকে ফটক পর্যন্ত যেতে দেয়নি।

তিনি বলেন, “আদালতের আদেশ মানা হচ্ছে না। ২.৫ কোটি মানুষের প্রতিনিধিকে কেন আটকানো হচ্ছে?”

ইমরানের দল ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ ( পিটিআই ) নেতারা—জুলফি বুখারি ও মেহর বানো কুরেশি—সরকারের কাছে ইমরানের স্বাস্থ্যের বিষয়ে “স্বচ্ছ বিবৃতি” ও পরিবারকে দ্রুত সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

‘ইমরান খান সুস্থ, গুজব ছড়ানো হচ্ছে’

তবে আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, সামাজিক মাধ্যমে চলমান সব দাবি “ভিত্তিহীন গুজব”। ইমরান খান সুস্থ আছেন, তাকে অন্য কোথাও সরানো হয়নি এবং বিপজ্জনক অবস্থার মতো কিছু ঘটেনি।

তবে তাতে গুজব থামেনি। কয়েকটি বিদেশি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ইমরানের মৃত্যু নিয়ে ‘অবৈধ দাবি’ ছড়ালে তা আরও জোর পায়—যদিও কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা তা নিশ্চিত করেনি।

‘স্ট্রিটলাইট নিভিয়ে পুলিশ হামলা করেছে’

ইমরানের তিন বোন— নুরিন নিয়াজি, আলীমা খান ও ড. উজমা খান—বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে জেলের বাইরে অবস্থান করলে পুলিশ ‘পরিকল্পিত হামলা’ চালায়।
নুরিনের দাবি, তাকে চুল ধরে টেনে ফেলা হয়, তিনি আহতও হন।

তাদের অভিযোগ, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

আদিয়ালা জেল পাঞ্জাব সরকারের অধীনে, যার নেতৃত্বে আছেন মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ। তিনি বলেন, সাক্ষাৎসংক্রান্ত বিষয়ে তার “কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।”

ইমরান খান আগে অভিযোগ করেছিলেন—জেলের সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করছেন একজন সেনা কর্নেল।