নাইজেরিয়ায় ৩০৩ শিশু ও ১২ শিক্ষক অপহরণ
৫০ শিক্ষার্থী পালিয়ে এসেছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:২৭, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
সেন্ট মেরিজ প্রাইভেট ক্যাথলিক স্কুলে বারান্দায় পড়ে আছে শিক্ষার্থীদের জিনিসপত্র। ছবি সিএনএন
নাইজেরিয়ার উত্তরের নাইজার অঙ্গরাজ্যের একটি ক্যাথলিক স্কুল থেকে অপহৃত হওয়া ৩০৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত ৫০ জন অপহরণকারীদের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী ধর্মীয় সংগঠন ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া (সিএএন) । তবে এখনো ২৫০ শিক্ষার্থীসহ মোট ২৬৫ জন বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন ১২ শিক্ষক ও স্কুল স্টাফদের তিন সন্তানও।
শুক্রবার সেন্ট মেরিজ প্রাইভেট ক্যাথলিক স্কুলে হামলা চালিয়ে সশস্ত্র বন্দুকধারীরা গণঅপহরণ চালায়। অপহৃতদের মধ্যে দশ বছর বয়সী শিশুও আছে। অপহরণের ঘটনার পর থেকে পুরো অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নাইজার স্টেটের সিএএন শাখার চেয়ারম্যান–এর মুখপাত্র ড্যানিয়েল আতোরি জানান,শুক্রবার থেকে শনিবারের মধ্যে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা বন্দিদশা থেকে পালাতে সক্ষম হয়। নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনিশ্চিত থাকায় তারা স্কুলে ফিরে যায়নি; বরং সরাসরি পরিবারগুলোর কাছে গেছে।
তিনি জানান, অধিকাংশ শিক্ষার্থী জঙ্গলের ভেতর কয়েক ঘণ্টা দৌড়ে পালিয়ে নিরাপদ গ্রামে পৌঁছায়।
সিএএনের হিসাব অনুযায়ী-স্কুলের ২৫০ শিক্ষার্থী,স্টাফদের তিন সন্তান,১২ শিক্ষকসহ মোট ২৬৫ জন এখনো সশস্ত্র দস্যুদের কবলে।
নার্ভঘন পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়কে সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার অ্যাঞ্জেলাস প্রার্থনার সাপ্তাহিক বক্তব্যে পোপ লিও অপহৃত শিশু ও শিক্ষকদের মুক্তির জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্ব সম্প্রদায় ও নাইজেরিয়ার কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
পোপ লিও বলেন,“এতগুলো তরুণ-তরুণীর অপহরণের খবর আমাকে ব্যথিত করেছে। তাঁদের পরিবারের আকুতি আমি অনুভব করতে পারি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি।”
ঘটনার পরদিন শনিবার স্কুল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকেরা গেলে দেখা যায়—ছাত্রীদের ডর্মিটরির দরজায় ছড়িয়ে আছে ব্যাগ, বই, কাপড়, জুতা—সবই ফেলে রেখে গেছে আতঙ্কে পালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা।

উত্তর নাইজেরিয়া: অপহরণের শিল্পে পরিণত হয়েছে সংগঠিত অপরাধ
গত কয়েক বছর ধরে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চল সশস্ত্র দস্যু, জঙ্গি গোষ্ঠী এবং চোরাচালানিদের জন্য প্রধান নিরাপত্তাহীন এলাকায় পরিণত হয়েছে। অপহরণ এখন সেখানে একটি ‘বাণিজ্যে’ রূপ নিয়েছে—স্কুল থেকে গণঅপহরণ,গির্জায় হামলা,গ্রামবাসীকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণের দাবি সবই নিয়মিত ঘটনা।
এই সপ্তাহের শুরুতে পাশের কোয়ারা অঙ্গরাজ্যের একটি গির্জায় হামলা চালিয়ে অন্তত দুজন নিহত এবং কয়েকজন উপাসক, এমনকি পাদ্রিকেও তুলে নিয়ে যায় বন্দুকধারীরা।
এছাড়া কেব্বি স্টেটে একটি সরকারি মেয়েদের আবাসিক স্কুল থেকে ২৫ ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়, যেখানে স্কুলের ভাইস-প্রিন্সিপালকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুবার ‘খ্রিস্টানদের গণহত্যা’ অভিযোগ এনে নাইজেরিয়ায় সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন—বাস্তব পরিস্থিতি আরও জটিল। চরমপন্থী ইসলামপন্থী হামলার লক্ষ্য কখনো খ্রিস্টান, কখনো মুসলিম—উভয় সম্প্রদায়ই সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে জাতিগত সংঘাত, জমি-জলবিরোধ, কৃষক-চারাওয়ালাদের দ্বন্দ্ব এবং উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সহিংসতা একসঙ্গে মিলেমিশে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
ওয়াশিংটন–আবুজা নিরাপত্তা সংলাপ
মার্কিন সচিব (সেক্রেটারি) অব ওয়ার পিট হেগসেথ বৃহস্পতিবার নাইজেরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নুহু রিবাদুর সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন—“ট্রাম্প প্রশাসনের নেতৃত্বে আমরা নাইজেরিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, যাতে জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে খ্রিস্টান নিপীড়ন বন্ধ করা যায়।”
নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে—অপহরণকারীরা সাধারণত মুক্তিপণের জন্য অপেক্ষা করে,
নিরাপত্তা বাহিনীর তাড়া খেলে বন্দিদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে বিভিন্ন জঙ্গলে সরিয়ে নেয়,কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্দিদের ঘোরানো হয় যাতে উদ্ধার অভিযান কঠিন হয়।
অপহৃত ২৬৫ জনকে উদ্ধারের বিষয়ে এখনো কোনো সরকারি সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি। সূত্র : সিএনএন
