রোববার, ০২ নভেম্বর ২০২৫

| ১৮ কার্তিক ১৪৩২

সুদানের দারফুরে গণহত্যা

শতাধিক পুরুষকে গুলি করে হত্যা, শত শত নিখোঁজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক 

প্রকাশ: ১৪:০১, ১ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৪:২০, ১ নভেম্বর ২০২৫

শতাধিক পুরুষকে গুলি করে হত্যা, শত শত নিখোঁজ

ছবি : সংগৃহীত

সুদানের পশ্চিম দারফুর প্রদেশের আল-ফাশির শহর দখলের পর বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা ও জোরপূর্বক নিখোঁজ করার অভিযোগ উঠেছে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর বিরুদ্ধে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, কয়েকশ’ বেসামরিক নাগরিক ও নিরস্ত্র যোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে—যা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী আলখেইর ইসমাইল জানিয়েছেন, উটের পিঠে সওয়ার আরএসএফ সদস্যরা শতাধিক পুরুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে জলাধারের পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায়। এরপর বর্ণবাদী গালাগালের পর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। “আমার স্কুলের এক বন্ধু আমাকে চিনে বলেছিল, ‘ওকে মারো না।’ বাকিদের সবাইকে মেরে ফেলা হয়,”—বলেছেন ইসমাইল।

তিনি জানান, খাদ্য সরবরাহ দিতে শহরে ঢোকার পর তাকেও আটক করা হয়েছিল, যদিও তিনি নিরস্ত্র ছিলেন।

রয়টার্স সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্য যাচাই করতে না পারলেও আরও তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী ও ছয়জন ত্রাণকর্মী একই রকম তথ্য দিয়েছেন।

আরএসএফের অস্বীকার ও পাল্টা দাবি

আরএসএফ কর্তৃপক্ষ গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে—এইসব তথ্য সেনাবাহিনীর পরাজয় ঢাকতে “মিডিয়ার অতিরঞ্জন।” তারা দাবি করেছে, যাদের আটক করা হয়েছে তারা আসলে সৈন্য বা যোদ্ধা, যাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়েছে।

একজন শীর্ষ আরএসএফ কমান্ডার বলেন, “এমন হত্যার ঘটনা ঘটেনি। বরং কিছু সৈন্য ছদ্মবেশে বেসামরিক রূপে লুকিয়ে ছিল।” তবে তিনি স্বীকার করেন যে, বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং কিছু গ্রেপ্তারও হয়েছে।

চিকিৎসা সংস্থার বিবৃতি ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

মানবিক সংস্থা মেডসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের (ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস) জানিয়েছে, ২৬ অক্টোবর প্রায় ৫০০ বেসামরিক ও সেনা সদস্য পালানোর চেষ্টা করলে অধিকাংশকেই আরএসএফ ও মিত্র বাহিনী হত্যা বা বন্দি করে। বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ জানিয়েছেন, নারী-পুরুষ-জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে আলাদা করা হয় এবং অনেক পুরুষকে মুক্তির জন্য ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি সুদানি পাউন্ড (প্রায় ৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার) মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।

দারফুরে নতুন করে বিভক্তি গভীরতর

আল-ফাশির দখল সুদানের দুই-দেড় বছরের গৃহযুদ্ধে একটি টার্নিং পয়েন্ট। এর ফলে দেশটি কার্যত ভৌগোলিকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বুধবার রাতে বক্তৃতায় তার বাহিনীকে বেসামরিকদের সুরক্ষা দিতে নির্দেশ দেন এবং আটক ব্যক্তিদের মুক্তির নির্দেশ দেন। তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স ডি ওয়াল বলেন, “আল-ফাশিরে যা ঘটেছে, তা আগের জেনেইনা শহর ও ২০০০ দশকের প্রথম দারফুর গণহত্যার প্রতিচ্ছবি।”

নিখোঁজদের জন্য অপেক্ষা

ননভায়োলেন্ট পিসফোর্স-এর কর্মকর্তা মেরি ব্রেস জানিয়েছেন, তাওইলা শহরে আসা শরণার্থীদের বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ পুরুষ। অনেককে আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে আটকে রাখা হয়েছে।

এক পালিয়ে আসা নারী তাহানি হাসান বলেন, “তারা আমাদের মেরেছে, গালাগাল দিয়েছে, খাবার-পানি ছুঁড়ে ফেলেছে। পুরুষদের আলাদা করে নিয়ে গেছে। আমরা জানি না তারা বেঁচে আছে কি না।”

মানবিক সংকট তীব্র হচ্ছে

জাতিসংঘের হিসাবে, হামলার সময় আল-ফাশিরে ছিল প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। এখন পর্যন্ত মাত্র ৬২ হাজার শরণার্থী শনাক্ত হয়েছে, যাদের অল্প কয়েক হাজার তাওইলায় আশ্রয় নিয়েছে। বাকিদের অবস্থান অজানা। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার সংকটে পুরো অঞ্চল এখন মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

পুলিশ আটকে দিল এবতেদায়ী শিক্ষকদের ‘লং মার্চ টু যমুনা’ পদযাত্রা
মালিবাগে ঝিলের জায়গায় থানা ভবন নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ হাই কোর্টের
বিরাট কোহলির রেকর্ড ভাঙলেন বাবর আজম
ড. ইউনূসকেই জুলাই সনদ আদেশ জারি করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
ড. ইউনূসকেই জুলাই সনদ আদেশ জারি করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
দুই পক্ষের সঙ্গে ঐক্যমত: নির্বাচনের পরই বিশ্ব ইজতেমা
দেশীয় ফ‍্যাশনেবল হ্যান্ডব্যাগেই ভাইরাল প্রধানমন্ত্রী..!
আওয়ামী লীগ নেতা হত্যাকাণ্ডে ছেলে গ্রেফতার
সনদ বাস্তবায়নে আবারও আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
জাকির নায়েকের সম্ভাব্য সফরে দিল্লির মন্তব্যে ঢাকার প্রতিক্রিয়া
‘দেলুপি’র ট্রেলার: খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জীবন বদলানোর গল্প