সতর্ক বার্তা জেমি ডাইমনের
আমেরিকার শেয়ারবাজারে বড় ধসের ঝুঁকি বাড়ছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:১২, ৯ অক্টোবর ২০২৫
ছবি :ইন্টারনেট
আমেরিকার শেয়ারবাজারে আসন্ন বড় ধসের আশঙ্কা নিয়ে সতর্ক করলেন বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংকার জেমি ডাইমন। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যাংক জেপি মরগ্যান চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এই আর্থিক দিগন্তে অস্থিরতার সংকেত দিয়েছেন বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে।
তিনি বলেন, “আগামী ছয় মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্টক মার্কেটে একটি গুরুতর পতনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, যা বর্তমানে বাজারে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না।”
ডাইমন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার সাম্প্রতিক সময়ে অতিমূল্যায়নের দিকে যাচ্ছে।
জেপি মরগ্যানপ্রধান বলেন, “আমি এ নিয়ে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি উদ্বিগ্ন,”।
তার মতে, বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনেক বেশি অনিশ্চিত। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, এবং আর্থিক শৃঙ্খলার ঘাটতি—সব মিলিয়ে বাজারে অস্থিতিশীলতা বাড়ছে।
তিনি বলেন, “অজানা বহু উপাদান এখন অর্থনীতির সামনে প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে,” ।“এই অনিশ্চয়তার মাত্রা সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হওয়া উচিত।”
ডাইমন বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই আজকের শেয়ারবাজারের দ্রুত উত্থানের বড় চালিকা শক্তি হলেও এর মধ্যে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসের ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি তুলনা টানেন ১৯৯০–এর দশকের শেষের ‘ডটকম বাবল’-এর সঙ্গে, যখন প্রযুক্তি শেয়ারে বিনিয়োগের বুদবুদ ফেটে বাজারে বিপর্যয় নেমেছিল।
“এআই বাস্তব, এবং দীর্ঘমেয়াদে তা লাভজনক হবে,” বলেন ডাইমন। “কিন্তু যেমন গাড়ি বা টেলিভিশন শিল্পে সবাই সফল হয়নি, তেমনই এআই ক্ষেত্রেও অনেক বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত হারিয়ে যাবে।”
আলোচনায় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাত নিয়েও কথা বলেন ডাইমন। তিনি বলেন, “মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সি মজুতের কথা বলে, আমি বলি—আমাদের গুলি, বন্দুক আর বোমা মজুত করা উচিত।”
তার যুক্তি, “বিশ্ব এখন অনেক বেশি বিপজ্জনক জায়গায় পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে বড় সম্পদ।”
ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্নে ডাইমন বলেন, তিনি মনে করেন ফেডের স্বাধীনতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন—যদিও জেরোম পাওয়েলকে প্রকাশ্যে “বোকা” বলেছেন—তবুও ফেডের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।
বিশ্বমঞ্চে আমেরিকার ভূমিকা সম্পর্কেও তিনি মন্তব্য করেন।“আমেরিকা এখন কিছুটা কম নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে পড়েছে,” বলেন ডাইমন। তবে তিনি মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ ইউরোপকে নিজস্ব প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার দিকে ধাবিত করেছে—যা ইতিবাচক পরিবর্তন।
সাক্ষাৎকারে ডাইমন বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা “খুবই কাছাকাছি পর্যায়ে” রয়েছে।
তার দাবি, ভারত-রাশিয়া তেলবাণিজ্যের কারণে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক তুলে নেওয়ার বিষয়ে ওয়াশিংটন ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে।“আমি ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, ভারতীয় শুল্ক–বিষয়ক সমস্যার সমাধান তারা করতে যাচ্ছেন,” বলেন তিনি।
ডাইমনের নাম দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী বা এমনকি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবেও আলোচনায়।তবে তিনি বলেন, “রাজনীতি এখন আমার এজেন্ডায় নেই। আমার লক্ষ্য জেপি মরগ্যানকে আরও শক্তিশালী ও স্থিতিশীল রাখা।”তবুও হাস্যরসের ছলে তিনি বলেন, “আপনি যদি আমাকে প্রেসিডেন্সি দিয়ে দেন, আমি নেব। আমার মনে হয়, আমি ভালো করব!”
