গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার দুই বছর, নিহত ৬৭ হাজার
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:৪১, ৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১১:৪৩, ৭ অক্টোবর ২০২৫
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার দুই বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় আক্রমণ শুরু করে দখলদার বাহিনী। সেই থেকে অবরুদ্ধ উপত্যকায় চলমান হামলা এখনো থামেনি। দুই বছরে গাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে, আহত প্রায় এক লাখ সত্তর হাজার। হাজারো পরিবার এখনো প্রিয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারেনি ধ্বংসস্তূপ থেকে।
এই দুই বছরে শুধু বিমান হামলা বা স্থল হামলাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি ইসরায়েল। প্রথম থেকেই গাজা উপত্যকাটিকে অবরোধ করে রেখেছে তারা। ফলে ওষুধ, খাদ্য, পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছানো কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলেই গাজার মানুষ ভয়াবহ ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে পড়েছে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার কিছু এলাকায় ইতিমধ্যেই দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়েছে। প্রায় পুরো জনগোষ্ঠীই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে। শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে মারাত্মক অপুষ্টি ছড়িয়ে পড়েছে।
অবরোধের কারণে স্বাস্থ্যসেবাও বিপর্যস্ত। বেশিরভাগ হাসপাতাল ধ্বংসপ্রাপ্ত অথবা ওষুধ ও সরঞ্জাম সংকটে কার্যত অচল। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাবে মহামারির ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একে গাজার মানুষের অস্তিত্বের ওপর পরিকল্পিত হুমকি বলে অভিহিত করেছে।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের ওপর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের জীবনযাত্রাকে এমনভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, যাতে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও একই অভিযোগ করছে।
চাথাম হাউসের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সানাম ভাকিল মনে করেন, দুই বছরে ইসরায়েল গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলেও আসলে কী অর্জন করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বরং এর ফলে তেল আবিব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গাজার সর্বশেষ পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মানুষ একবেলা খাবারের জন্যও হাহাকার করছে। শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে, মায়েরা অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। যুদ্ধ ও হামলার পাশাপাশি এখন ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও অনিশ্চয়তাই গাজার মানুষের প্রধান শত্রু হয়ে উঠেছে।
দুই বছর আগে শুরু হওয়া এই আগ্রাসন এখন মানব ইতিহাসের ভয়াবহতম বিপর্যয়ের এক উদাহরণ। গাজার রক্তাক্ত প্রান্তর বিশ্বকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, যুদ্ধ শুধু বন্দুকের গুলি বা বোমার বিস্ফোরণ নয়, যুদ্ধ হলো মানুষের আশা, স্বপ্ন আর বেঁচে থাকার অধিকারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার নাম।
