সিনেটে পঞ্চমবারও ব্যর্থ অর্থায়ন বিল
যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন সংকট আরও তীব্র হচ্ছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:৩৭, ৭ অক্টোবর ২০২৫
সিনেটে হৈ চৈ ছবি : নিউজ টাইমস
যুক্তরাষ্ট্রে সরকার আংশিকভাবে বন্ধ থাকার (শাটডাউন) সংকট আরও দীর্ঘ হচ্ছে। সোমবার পঞ্চম দফায়ও সিনেটে অর্থায়ন বিল পাসে ব্যর্থ হয়েছে দুই প্রধান দল—ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান। এর ফলে অন্তত আরও কয়েকদিন স্থবির থাকবে সরকারি কার্যক্রম, আর বেতনহীন অবস্থায় কাজ চালিয়ে যেতে হবে হাজারো সরকারি কর্মচারীকে।
সোমবার সিনেটে একের পর এক দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়—একটি ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে, অন্যটি রিপাবলিকানদের। কিন্তু কোনো প্রস্তাবই প্রয়োজনীয় ৬০ ভোটের সীমা পেরোতে পারেনি। ডেমোক্র্যাটদের বিলটি ৪৫–৫০ ভোটে এবং রিপাবলিকানদের প্রস্তাব ৫২–৪২ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়।
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা
মূল বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হলো স্বাস্থ্যসেবা ও নিম্নআয়ের মানুষের মেডিকেড সুবিধা। ডেমোক্র্যাটরা দাবি করছেন, যে কোনো অর্থায়ন বিলের মধ্যেই দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত আমেরিকানদের স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
অন্যদিকে রিপাবলিকানরা চাইছেন “পরিষ্কার” অর্থায়ন বিল—যেখানে এসব বিষয় পরবর্তী সময়ে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে “স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক আলোচনায় আছেন”। তবে ডেমোক্র্যাটদের সিনেট নেতা চাক শুমার এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লিখেছেন, “এটা সত্য নয়।”
হোয়াইট হাউসের সতর্কবার্তা: ছাঁটাই অনিবার্য হতে পারে
শাটডাউনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট সোমবার জানান, যদি দ্রুত সমাধান না আসে, তবে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে স্থায়ী ছাঁটাই শুরু হবে।
তিনি বলেন, “আমরা কেউই কর্মী ছাঁটাই চাই না। কিন্তু সরকার বন্ধ থাকলে, অনেক সংস্থা বাধ্য হবে তাদের কর্মীদের বিদায় দিতে।”
ট্রাম্প নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে বলেন,“আমি ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাজ করতে চাই, কিন্তু তার আগে তাদের সরকার খুলতে দিতে হবে। বরং আজ রাতেই সরকার চালু করা উচিত।”
দোষারোপের রাজনীতি
অচলাবস্থা নিয়ে দুই দলের নেতারা পরস্পরকে দায়ী করছেন। হাউসের স্পিকার মাইক জনসন অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা “রাজনৈতিক ঢাল” তৈরি করতে বিলের বিরোধিতা করছে। অপরদিকে হাউসের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফরিস বলেছেন, রিপাবলিকানরা “জনমতের আদালতে হেরে যাচ্ছে বলেই মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।”
সর্বশেষ সিবিএস ও বিবিসির যৌথ জরিপ অনুযায়ী, বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক এই শাটডাউনের জন্য উভয় দলকেই দায়ী করলেও ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের ওপর দায় কিছুটা বেশি চাপছে।
চাকরি, অর্থনীতি ও প্রশাসনে বিপর্যয়
ফেডারেল তহবিল বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী ফারলো (অর্থাৎ বিনা বেতনে ছুটি) অবস্থায় আছেন। অনেকে আবার বেতন ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্লেষকদের মতে, শাটডাউন দীর্ঘ হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো ও অর্থনীতির ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ওয়াশিংটনে এখন প্রশ্ন একটাই—কোন দল আগে নতি স্বীকার করবে? আপাতত সেই ইঙ্গিত মিলছে না কোনো পক্ষের কাছ থেকেই।
