লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার হায়সম আলী তাবাতাবাই নিহত হয়েছেন। রবিবার স্থানীয় সময় রাতে দাহিয়েহ এলাকায় হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে এই হামলা চালানো হয়। এতে তাবাতাবাইসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হন। 

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাজুড়ে আবারও ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সর্বশেষ এই হামলায় অন্তত ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৮৭ জন।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ জানিয়েছে—হামাস ইউরোপজুড়ে গোপন সেল তৈরি করে “অন-কম্যান্ড” হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ইউরোপীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযানে অস্ত্রভাণ্ডার উদ্ধার, সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার এবং প্রতিহত হয়েছে একাধিক হামলার পরিকল্পনা।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনায় ক্ষুব্ধ ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন-গভির। তিনি বলেন, “জাতিসংঘ যদি এই কূট রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী, আপনার উচিত হবে পিএ–র কর্মকর্তাদের বেছে বেছে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া। তারা সবদিক থেকেই সন্ত্রাসী। আর আবু মাজেনকে (মাহমুদ আব্বাস) অবশ্যই গ্রেপ্তার করতে হবে।”

ডব্লিউএইচও জানাল—গাজার বাইরে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি না পাওয়ায় শত শত মানুষের মৃত্যু, আরও কয়েক হাজার রোগী মৃত্য ঝুঁকিতে; ইসরায়েলি কারাগারেও নিহত ৯৮ ফিলিস্তিনি।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ঘিরে দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংকট যেন আরেকবার বৈশ্বিক পরাশক্তির পালাবদলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এর মাঝেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দরজায় পৌঁছায়। আর সেই খসড়া প্রস্তাবই—জটিল আলোচনার পর—হঠাৎ করেই বেশিরভাগ সদস্য দেশের সমর্থন পেয়ে পাস হয়ে গেল।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) গাজা ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা সমর্থনের প্রস্তাবে ভোট নিতে যাচ্ছে। ইসরায়েল–হামাস দুই বছরের যুদ্ধবিরতির পরবর্তী রাজনৈতিক কাঠামো, গাজাকে অস্ত্রমুক্ত করা এবং নতুন নিরাপত্তা জোট গঠনের বিষয়গুলোই প্রস্তাবের মূল কেন্দ্র। এতে ট্রাম্পের নেতৃত্বে ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি অন্তর্বর্তী শাসন কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের প্রস্তাব রয়েছে, যা ২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

ফিলিস্তিনের অধিকৃত হেবরনে ঐতিহাসিক ইব্রাহিমি মসজিদ মুসলিমদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে পুরোনো শহরজুড়ে কড়া কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইহুদি বসতকারীদের উৎসব পালনের সুযোগ করে দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় কর্মীরা। সামরিক অবরোধে বহু ফিলিস্তিনি ঘরেও ফিরতে পারেননি।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আগামী সপ্তাহের যুক্তরাষ্ট্র সফরকে ঘিরে হোয়াইট হাউসে চলছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রস্তুতি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এটি শুধু আনুষ্ঠানিক বৈঠক নয়—সৌদি আরবকে সম্মান জানানোরও সুযোগ। আগমন-অনুষ্ঠান ও অভ্যর্থনা থেকে শুরু করে ওভাল অফিস বৈঠক, স্বাক্ষর অনুষ্ঠান, মধ্যাহ্নভোজ ও ইস্ট রুমে বিশেষ নৈশভোজ—সবকিছুর মাধ্যমে দুই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপে গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি, হামাস–ইসরায়েল নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি, বন্দী বিনিময় এবং মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সিরিয়ার স্থিতিশীলতাও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। রাশিয়ার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই আলাপকে চলমান আঞ্চলিক কূটনৈতিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গাজায় প্রবল বৃষ্টিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের অস্থায়ী তাঁবু প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। আশ্রয় ও ত্রাণ সংকট আরও গভীর হচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, ইসরাইলের আরোপিত সহায়তা নিষেধাজ্ঞা না উঠলে লাখো মানুষ শীতেও কঠিন মানবিক বিপর্যয়ে পড়বে। বহু আরব দেশ গাজা শান্তি পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।