ভূমিকম্পের কারণ সম্পর্কে হাদিসে যা বলা হয়েছে
মাইসারা জান্নাত
প্রকাশ: ১১:৩৪, ২১ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১২:০১, ২১ নভেম্বর ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
ভূমিকম্প এমন এক দুর্যোগ, যা মুহূর্তের মধ্যে সাজানো জনপদকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগেও মানুষ এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস পাওয়ার প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে ইসলামি আকিদা ও বিশ্বাস অনুযায়ী ভূমিকম্প কেবল সাধারণ প্রাকৃতিক কোনো ঘটনা নয়, বরং এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীবাসীর জন্য এক কঠোর সতর্কবার্তা। নবীজি (সা.) ভূমিকম্প হওয়ার কয়েকটি কারণ বর্ণনা করেছেন। কোরআনেও বলা হয়েছে ভূমিকম্প সম্পর্কে। তা উল্লেখ করা হলো।
ভূমিকম্প সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদপানের সয়লাব হবে।’ (তিরমিজি)
নবীজি (সা.) আরো বলেছেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখলে তা আত্মসাৎ করা হবে, জাকাতকে মনে করা হবে জরিমানা, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে বাবাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে এবং সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি সমাজের শাসক হবে। সেই সময় তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড়ের, ভূকম্পনের, ভূমিধসের, লিঙ্গ পরিবর্তন, পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনের জন্য।’ (তিরমিজি)
অন্যত্র বলা হয়েছে, ভূমিকম্প হচ্ছে কেয়ামতের একটি অন্যতম আলামত। কেয়ামত যতই নিকটবর্তী হবে, ভূমিকম্পের পরিমাণ ততই বাড়তে থাকবে।
ভূমিকম্পের বিভীষিকা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মানব জাতি, তোমরা ভয় করো তোমাদের রবকে। নিশ্চয়ই কেয়ামত দিবসের ভূকম্পন হবে মারাত্মক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, স্তন্যপায়ী মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানের কথা ভুলে যাবে, সব গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। মানুষকে মাতালের মতো দেখাবে, আসলে তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।’ (সুরা হজ ১-২)
আজকে রাজধানী ঢাকায় ভয়ংকর ভূমিকম্প হয়েছে। ইতিপূর্বে এমন ভয়ংকর পর্যায়ের হয়নি। সব মানুষ রাস্তায় বের হয়ে এসেছে। সবার চোখে মুখে অস্থিরতা। কোরআনের এই বর্ণনা অনুযায়ী, কেয়ামতের সময়ের ভূমিকম্প কতটা ভয়ংকর পর্যায়ের হবে, তা কি আজকের ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়?
সুতরাং বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প হচ্ছে, তা মহান আল্লাহর পাঠানো সতর্কবার্তার নিদর্শনগুলোর একটি। এগুলো দিয়ে তিনি বান্দাদের সাবধান করেন। মূলত এগুলো মানুষের পাপ ও অপরাধের ফল।
ভূমিকম্প এমনই এক দুর্যোগ, যা নিবারণ, প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা বা পূর্বাভাস পাওয়ার মতো কোনো প্রযুক্তি মানুষ এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। সুতরাং ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
বান্দার অপরাধ ক্ষমা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা ৩০)
তাই আসুন, জীবনের যাবতীয় পাপাচার থেকে আমরা মহান আল্লাহর কাছে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করি।
