চাঁদ ছুঁয়ে দিল নবীজির সবুজ গম্বুজ
মাইসারা জান্নাত
প্রকাশ: ১৩:১০, ৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৩৮, ৭ নভেম্বর ২০২৫
নবীজি (সা.)-এর রওজা শরিফের সবুজ গম্বজের উপর পূর্ণিমার চাঁদ। ছবি: ইনসাইড দ্য হারামাইন
মদিনার আকাশে এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়। গভীর রাত, চারপাশ নিস্তব্ধ, রওজা শরিফের উপর পূর্ণিমার চাঁদ। চাঁদ যেন ছুঁয়ে দিল নবীজির সবুজ গম্বুজ। মসজিদে নববীর সেই সবুজ গম্বুজ, যার নিচে শায়িত আছেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তার উপর চাঁদের এমন অবস্থান যেন এক অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রকাশ। মনে হয়, চাঁদ যেন নবীজিকে সালাম জানাতে নেমে এসেছে।

মসজিদে নববী, সবুজ গম্বুজ। ছবি: সংগৃহীত
চাঁদ চেনে নবীজিকে। চাঁদ জানে নবীজির কত মর্যাদা, কত সম্মান। শৈশবে নবীজি চাঁদের সঙ্গে খেলা করতেন। নবীজির হাতের আঙুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। মদিনার আনসার সাহাবিরা নবীজিকে এই পূর্ণিমা চাঁদের সঙ্গেই তুলনা করেছিলেন। কাজী নজরুল তাকে আখ্যায়িত করেছিলেন মধু পূর্ণিমার চাঁদ বলে।
নবীজি (সা.) শৈশবে চাঁদের সঙ্গে খেলা করতেন। তিনি হাত নাড়ালে চাঁদও নাড়াচাড়া করত। যেদিকে হাত ঘোরাতেন সেদিকে চাঁদ চলে যেত। শিশুরা ঝুম-ঝুমি দিয়ে যেমন খেলা করে, বিষয়টি অনেকটা সেরকমই ছিল। তবে এই ঘটনার বর্ণনা যে হাদিসে এসেছে, সেই হাদিসকে ইসলামি স্কলাররা দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন।
নবীজির আঙুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিষয়টি কোরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সুরা কমারের শুরুতেই আছে নবীজি (সা.)-এর আঙুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিবরণ। নবীজি (সা.) তখন মক্কার অবিশ্বাসী ও ইহুদিদের একত্ববাদের দাওয়াত দিচ্ছেন। আবু জাহেলের নেতৃত্বে একদল অবিশ্বাসী ও ইহুদিরা এসে জানালো, মুহাম্মদ (সা.) যদি চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করে দিতে পারে তাহলে তারা আল্লাহর রাসুল হিসেবে তাকে মেনে নেবে।
অতঃপর নবীজি (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করে আঙুলের ইশারা করলে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তখন ইহুদিরা ইসলাম গ্রহণ করলেও অবিশ্বাসীরা তার এই মুজেজাকে জাদু বলে আখ্যায়িত করে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
নবীজি (সা.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসেন তখন মদিনার আনসার সাহাবিরা তাকে স্বাগত জানাতে সমস্বরে গেয়ে উঠেন, ‘তলাআল বাদরু আলাইনা’ অর্থাৎ ‘আমাদের উপর পূর্ণিমার চাঁদ উদিত হয়েছে’।
তখন নবীজিকে তুলনা করা হয়েছিল পূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গে। কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত পৃথিবীতে তিনি নিয়ে এনেছিলেন ঐশ্বরিক জ্ঞানের আলো, ন্যায় ও শান্তির বার্তা। পূর্ণিমার আলোয় যেমন পথ চলা যায়, তেমনি নবীজির শিক্ষায় কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে জীবনযাপন করে জান্নাত লাভ করা যায়।

নবীজি (সা.)-এর রওজা শরিফের সবুজ গম্বুজের উপর পূর্ণিমার চাঁদ। ছবি: ইনসাইড দ্য হারামাইন
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নবীজির শৈশবের চিত্র কল্পনা করে নাত লিখেছেন, ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে, মধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে।’ যেন মধু পূর্ণিমার চাঁদের উপর শুধু পূর্ণিমার চাঁদ উদিত হয়েছে। সবুজ গম্বুজের উপর এ দৃশ্য শুধু সৌন্দর্যের নয়, এটি গভীর অনুভূতিরও বিষয়।
