সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫

| ১৮ কার্তিক ১৪৩২

কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মন যুগিয়ে চলা বাদ দিতে হবে সরকারকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫:২২, ২ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৩২, ২ নভেম্বর ২০২৫

কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মন যুগিয়ে চলা বাদ দিতে হবে সরকারকে

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। ছবি: সমাজকাল

গণভোট ও সংবিধান আদেশ নিয়ে নতুন করে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আস্থাহীন সমাজে সংস্কার ও নির্বাচনী জোট কতটা কার্যকর হবে, তা এখন বড় প্রশ্ন। বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান— কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মন যুগিয়ে চলার নীতি পরিহার করতে হবে, কারণ এটাই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এবি পার্টি ও আপ বাংলাদেশ — এই তিন দলের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।  রবিবার সকালে এই তিন দলের আয়োজনে  ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো ‘স্বল্প আস্থার সমাজে সংস্কার ও নির্বাচনী ঐক্যের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভা।

এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি এডভোকেট হাসনাত কাইউম। প্রধান আলোচক ছিলেন সেয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রচিন্তক ড. মুশতাক হোসেন খান।

বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) অধ্যাপক আব্দুল ওহাব মিনার, আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মো. হিজবুল্লাহ, এবি পার্টির যুগ্ম সম্পাদক ব্যারিস্টার জোবায়ের আহমদ ভুঁইয়া, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক দিদার ভুঁইয়া, এবং আপ বাংলাদেশের প্রধান সংগঠক নাঈম আহমাদ।

উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, ভয়েস অব রিফর্মের সংগঠক ফাহিম মাসরুর প্রমুখ।
প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. মুশতাক হোসেন বলেন,“যে জাতি সমাজ পরিবর্তনের জন্য জীবন দিতে পারে, সেই জাতি শ্রদ্ধার যোগ্য। কিন্তু কায়েমি স্বার্থবাদীরা কখনও নতুন বন্দোবস্ত মেনে নেয় না।”

তিনি বলেন, “দেশে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট চলছে, অথচ ক্ষমতাসীনরা উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ সব জায়গা দখলে রাখার পদ্ধতি জানে।”

তিনি আরও বলেন, “আস্থার অভাবে রাজনৈতিক দলগুলো সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অথচ আস্থা থাকলে সবাই লাভবান হতে পারত।”
অধ্যাপক মুশতাক মন্তব্য করেন,“বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ টিকে আছে জনগণের সহজে ক্ষমা করে দেওয়ার অভ্যাসের কারণে।”

তিনি আস্থাহীনতা কমাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক শাস্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান, এবং বলেন 
“চোরদের সঙ্গে আপোষ করা যাবে না। যারা আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল, তাদের বিচার বা ক্ষমা চাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।”

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন,“বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বারবার সংবিধানের দোহাই দেন। কিন্তু জানতে চাই— ফ্যাসিস্ট হাসিনা কোন আর্টিকেলের অধীনে আপনাকে গুম করে শিলংয়ে পাঠিয়েছিল?”
তিনি বলেন, তথাকথিত ‘দায়িত্ব নেওয়ার কালচার’ আমাদের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে।

এবি পার্টি শক্তিশালী হলেও তাদের নেতারা যেন “পাবলিক টয়লেট ইজারা না নেয়”— এ নিশ্চয়তা দিতে না পারলে পরিবর্তন অসম্ভব, যোগ করেন তিনি।

সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মঞ্জু বলেন,“এক-দুটি রাজনৈতিক দলের মন যুগিয়ে চললে জুলাইয়ের শহীদ ও আহতদের কাছে চিরদিনের জন্য ভিলেন হয়ে থাকবেন।”

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন,“হাসিনার হাতে ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে নতুন শক্তিগুলোও এখন ক্ষমতা ভোগের উৎসবে ব্যস্ত।”

তিনি বলেন, “ভোটকেন্দ্র দখলকারীরা যদি আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, জনগণ আরও হতাশ হবে।”

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন,“আইনের শাসনের অভাব ও বৈষম্যমূলক অর্থনীতি আস্থাহীনতা বাড়িয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সমাজে বিপ্লবের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু পুরোনো নেতৃত্ব সেই সম্ভাবনা নষ্ট করেছে।”

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন বলেন,“বাংলাদেশ এখন চরম দুর্বল অবস্থায়, এটিকে স্থিতিশীল করতে নির্বাচন জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাড় দিতে শিখতে হবে— নচেৎ স্বৈরাচার আরও শক্তিশালী হবে।”

এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল ওহাব মিনার বলেন,“আমরা জীবিত থাকতে আওয়ামী লীগ এদেশে রাজনীতি করবে— এটা হতে পারে না।”

তিনি বলেন, “অহমিকা ছেড়ে সব দলকে ঐক্যের পথে আসতে হবে, না হলে ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত হবে”আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মো. হিজবুল্লাহ বলেন,“ফ্যাসিবাদ নির্মূলে শেখ মুজিবের ছবি টানানো বন্ধ করতে হবে। ফ্যাসিবাদের বীজ দলীয় কাঠামোতেই লুকিয়ে আছে।”

সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট হাসনাত কাইউম বলেন,“দেশের প্রশ্নে সবাইকে এক হয়ে নতুন রাজনীতির পথে হাঁটতে হবে। অতীতের কিছু প্রবীণ নেতা আন্দোলনকে ভুলপথে নিয়ে গেছেন, আর্থিক লোভেই রাষ্ট্র সংস্কার এখন অনিশ্চিত।”

তিনি বলেন,“হাসিনা–ওবায়দুল কাদেররা সাংবিধানিক কাঠামো এমনভাবে সাজিয়েছে যাতে ফ্যাসিস্ট হওয়ার উপাদান অন্তর্নিহিত।”
সভা শেষে তিন দলের পক্ষ থেকে ‘নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ ও আস্থাশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনে ঐক্যবদ্ধ পথচলার অঙ্গীকার’ ব্যক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

ফের পাবনা-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
নির্বাচন শেষে ফেব্রুয়ারিতেই একুশে বইমেলা
সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়: হাসনাত আবদুল্লাহ
গ্ৰাম, শহর, অলিগলি জিতবে এবার শাপলা কলি : সারজিস
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার-অপকৌশল দৃশ্যমান: তারেক রহমান
মানামা সংলাপে তুলসী গ্যাবার্ড অন্য দেশের সরকার বদলের নীতি থেকে সরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র
দেশে ভোটার বেড়ে হয়েছে ১২ কোটি ৭৬ লাখ
সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল
অন্য দলের প্রতীকে ভোটের বিপক্ষে এনসিপি, জানাল চিঠিতে
‘শাপলা কলি’ নিতে রাজি এনসিপি
পুলিশ আটকে দিল এবতেদায়ী শিক্ষকদের ‘লং মার্চ টু যমুনা’ পদযাত্রা
মালিবাগে ঝিলের জায়গায় থানা ভবন নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ হাই কোর্টের
বিরাট কোহলির রেকর্ড ভাঙলেন বাবর আজম
ড. ইউনূসকেই জুলাই সনদ আদেশ জারি করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
ড. ইউনূসকেই জুলাই সনদ আদেশ জারি করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
দুই পক্ষের সঙ্গে ঐক্যমত: নির্বাচনের পরই বিশ্ব ইজতেমা
দেশীয় ফ‍্যাশনেবল হ্যান্ডব্যাগেই ভাইরাল প্রধানমন্ত্রী..!
আওয়ামী লীগ নেতা হত্যাকাণ্ডে ছেলে গ্রেফতার
সনদ বাস্তবায়নে আবারও আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা