রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

| ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পিএসসির ভয় কেন?

প্রকাশ: ২১:৫৩, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পিএসসির ভয় কেন?

নাদিম মাহমুদ

আওয়ামী লীগের আমলে সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলোতে একটি বিষয়ে অবধারিত প্রশ্ন ছিল, তাহলো মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে জানাশোনাকে শাণিত করতে কিংবা প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালিত করতে এমন উদ্যোগ অবশ্যই দেশপ্রেমের অংশ। এই ধারাটির মধ্যে সরকারের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষাও ছিল।

কিন্তু অধ্যাপক ইউনূসের জামানায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয় নিয়ে গত ১৫ মাস যেভাবে বিতর্ক চলছে, তা ভাবতেই লজ্জা লাগে। তাদের জামানায় বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া অনেকটাই ‘পাপের’ পর্যায়ে গেছে। যদি পারত মুক্তিযুদ্ধকে ‘অস্বীকার’ করত, কিন্তু সেটি তো সম্ভব নয়, তাই কৌশলে মুক্তিযুদ্ধকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যাতে করে মনে হবে এই দেশে ‘ত্রিশ লাখ’ মানুষের প্রাণ বিসর্জন ছেলেখেলার মতো।তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার বেশ নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই তো কয়েক দিন আগে ৪৯তম বিসিএস এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষায় একগাদা ভুলের সাগরে মুক্তিযুদ্ধকে উপেক্ষা করে তুরস্কের নিষিদ্ধ সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিকেকে) পরিচয় করে দিয়েছিল, পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল, স্বাধীনতা দিবসকে কেবল জাতীয় দিবস হিসেবে জানতে চেয়েছিল।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো বিসিএস প্রশ্নপত্র দেখার পর মনে হয়েছে, এটি কি আসলেই বাংলাদেশের পিএসসি? এই যে দেখুন প্রথম প্রশ্নটি কতটা লজ্জার মধ্যে তারা করেছে। তারা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে, একাত্তরের মার্চ-এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ‘দখলদার বাহিনী’র বিরুদ্ধে গড়ে উঠা ‘প্রতিরোধ’ যুদ্ধের বিবরণ। কতটা লাজুক ভাব নিয়ে তারা প্রশ্নটি করেছে।

একটি দেশ নয় মাস ধরে যুদ্ধ করল, পাকিস্তানের সেনাদের বিরুদ্ধে, এই দেশের রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে, অথচ পিএসসি জানতে চেয়েছে ‘মার্চ-এপ্রিল’ মাসের প্রতিরোধ। কেন রে ভাই বাকি সাত মাস কি ‘রাজাকার’রা আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে যুদ্ধ করেছিল বুঝি? কী নির্লিপ্ত প্রশ্নকর্তা, কী নির্লিপ্ত আমাদের দেশ। পিএসসি যে ‘দখলদার বাহিনী’ বলল, সেটা কারা? এই দখলদারবাহিনী বুঝি পাড়ার মাস্তানরা ছিল? ‘পাকিস্তান’ কি পিএসসির ভাশুর লাগে, যে ওই নাম ডাকলে তাদের কষ্ট হবে, তাদের পূর্বপুরুষের আত্মা কষ্ট পাবে? দখলদার আর হানাদার শব্দ কিন্তু এক না। কিন্তু আপনারা পাকিস্তানের সম্মান রক্ষায় নেমে গেছেন, মুক্তিযুদ্ধকে ‘প্রতিরোধ’ শব্দ দ্বারা রিপ্লেস করার চেষ্টা করেছেন, যা ধিক্কার পাবার যোগ্য। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যদি প্রশ্ন করতে সমস্যা থাকে তাহলে বাদ দিন না ভাই, আপনাদের কাছ থেকে এইসব প্রশ্নের উত্তর না দিলেও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এতটুকু নড়চড় হবে না। পাকিস্তান ও তাদের এই দেশীয় সহযোগীরা ‘বাংলাদেশ’ নামের সাথে ঘৃণিত হিসেবে থাকবে।

আধা প্রশ্ন, প্রচ্ছন্ন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে চাওয়া পিএসসির মেরুদণ্ডের ওপরই আঘাত। যা ঘটেছে, যা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ তাকে আপনি চাইলেও মুছে ফেলতে পারবেন না। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার, বাংলাদেশের নামের সাথে লেখা আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তভেজা বাংলাদেশ কখনোই পথ হারাবে না।

লেখক: গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
nadim.ru@gmail.com

* মতামত লেখকের নিজস্ব

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

৫ বছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৪২%
৮-১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে ইসি প্রস্তুত, প্রধান উপদেষ্টাকে সিই
নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থ, পেশীশক্তি ও ধর্মের অপব্যবহার বিষয়ে অঙ্গীকার চায় টিআইবি
সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ‘ব্যর্থ’: টিআইবি
বাড়ল ভোজ্যতেলের দাম
কৃষি কর্মকর্তাদেরও লটারির মাধ্যমে পদায়ন: কৃষি উপদেষ্টা
আরও ১০০ কোল্ড স্টোরেজ: কৃষি উপদেষ্টা
ভোটের দায়িত্ব পাচ্ছেন না বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তারা
১৯৭১ সালেই মানুষ তাদের কর্মকাণ্ড দেখেছে : তারেক রহমান
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনারের বৈঠক
রোজা–পূজা নিয়ে মন্তব্য : জামায়াত প্রার্থী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা
৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ : পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান
নতুন জোটের ঘোষণা দিল এনসিপি
রাজবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত কবরস্থানে নাশকতা
প্রেস সচিবের ফেসবুক পোস্ট; ৩ কয়লাখনি থেকে কয়লা না তোলা ভুল ছিল
আজ নোয়াখালী মুক্ত দিবস
শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু
বিটিআরসির সামনে মোবাইল ব্যবসায়ীদের সড়ক অবরোধ