উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট ইস্যু
এবার মুখ খুললেন আরেক উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:০৫, ৯ অক্টোবর ২০২৫
সরকারের উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’ বিষয়ে এবার মুখ খুললেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, “শিক্ষকতার সূত্রে, ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ গ্রহণ করিনি। তাই, আজ ৭২ বছরের বেশি বয়সে আমাকে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয় তা হবে গভীর দু:খের বিষয়।”
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে সেফ এক্সিট বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করেন এই উপদেষ্টা। সেখানে ‘উপদেষ্টার রোজনামচা, চালকের হেলমেট নাই ও সেফ এক্সিট’ শিরোনামে করা এক পোস্টে নিজের, সরকারের ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে নিয়েও কথা বলেন তিনি।
এর আগে সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের (নিরাপদ প্রস্থান) কথা ভাবতেছে’। তার এই বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে।
নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের প্রথম প্রতিক্রিয়া জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি ৮ অক্টোবর সাংবাদিকদের বলেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) নিতে চান, এ বিষয়গুলো নাহিদ ইসলামকেই পরিষ্কার করতে হবে। উনি যদি কখনো পরিষ্কার করেন, তখন সেটি নিয়ে সরকারের বক্তব্যের কথা আসে। এর আগে এটি নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অবশ্য নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের কোন আলোচনা বা সমালোচনা করেননি। তিনি তার ফেসবুকে শুধু বলেছেন, ”সাংবাদিক উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট বিষয়ে আমার মন্তব্য জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়টি উত্থাপনকারী, প্রাক্তন উপদেষ্টা ও বর্তমান এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনা হিসাবে শ্রদ্ধার পাত্র। তাই তার বক্তব্যের ওপর আমার মন্তব্য করা শোভন নয়। তাছাড়া আমি রাজনৈতিক বিষয়ে কোন মন্তব্য করিনা।”
সরাসরি মন্তব্য না করলেও এই উপদেষ্টা তার ‘উপদেষ্টার রোজনামচা, চালকের হেলমেট নাই, ও সেফ এক্সিট’ শীর্ষক স্ট্যাটাসে তার কর্মময় অতীত ও বর্তমান সময় তু্লে ধরেছেন।
পাঠকদের সুবিধার্থে এই উপদেষ্টার স্ট্যাটাসটি বিষয়ভিত্তিক হুবহু তুলে ধরা হলো-
আশুগঞ্জ ট্রেন স্টেশনের বেহাল অবস্থা:
”গতকাল আমি সকাল ৭:৪৫ মিনিটে ট্রেনযোগে ভৈরব যাই। আমার সঙ্গে ছিলেন যাতায়ত খাত বিশেষজ্ঞ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড: মইনুদ্দিন, রেল ও সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, জেলা ও উপজেলা পরিষদ ও পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ।
ট্রেনে ওঠার আগে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করি ও ট্রেনে যাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় করি।
দশটা পনের মিনিটে ভৈরব পৌঁছাই ও সেখান থেকে গাড়িতে যেয়ে #আশুগঞ্জ# ট্রেন স্টেশন পরিদর্শন করি। সেখানে পৌঁছে বিএনপি, জামাতসহ স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলি। তাঁদের দাবী স্টেশনটিকে পূর্বের ন্যায় বি শ্রেণিভুক্ত করতে হবে। স্টেশনটির বেহাল অবস্থা। উঁচুতে অবস্থিত স্টেশনটিতে মহিলা ও বয়োবৃদ্ধদের ওঠার ব্যবস্থাটি কঠিন। সিগনালিং সহ স্টেশনটির অন্যান্য ত্রুটি নিরসন ও দীর্ঘমেয়াদে কি করা যায় সে বিষয়ে রেলের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিই।”
হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ:
”সেখান থেকে সরাইলের পথে রওনা হই। সাত/আট কিলোমিটার পথে এক ঘণ্টা অবস্থানের পরেও অগ্রগতি না হওযায় প্রথমে পায়ে হেঁটে ও পরে মোটর সাইকেল যোগে রওনা দিই। মোটর সাইকেল খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় চালক কিংবা যাত্রী কারোই হেলমেট নাই। আট দশটা মটরবাইক খুঁজে একটিমাত্র হেলমেট পাওয়া যায়। অনেক খোজাখুজির ও অপেক্ষার পরও চালকের জন্য হেলমেট না পেয়ে সবার পরামর্শে একমাত্র হেলমেটটি নিজে পড়ে রওয়া দিই। হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে পরামর্শ ও বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।”
রাস্তা সংস্কার বিষয়ে ছয়টি পদক্ষপ:
”যানজটের মূল কারণ সরাইল চৌরাস্তার নির্মাণ কাজ হলেও, পথে দেখতে পাই যে মূলত: চালকদের শৃঙ্খলাবোধ ও হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থাপনার অভাবে যাত্রায় বিলম্ব ঘটছে। উল্লেখ্য, ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের ঠিকাদার চলে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ফিরিয়ে এনে এখন পুনরায় কাজ শুরু করা হয়েছে। দুই লেনের মূল রাস্তার ডানপাশে দুই লেন ও বামপাশে একটি সার্ভিস লেন আছে। যেগুলির যথাযথ ব্যবহার করা হলে এত যানজট হবার কথা নয়। মূল রাস্তার দুই পাশে ডিভাইডার স্থানে স্থানে ভেঙ্গে ফেলেছে। পাশ থেকে গাড়ি উঠে দুই লেন কোথাও তিন চার লেনে পরিণত হয়েছে। ফলে সবাই আগে যেতে চাচ্ছে কেউই আগাতে পারছেনা। হাইওয়ে পুলিশ তৎপর থাকলে এটা হতোনা। এ বিষয়ে পুলিশের আইজিপির সাথে কথা হয়েছে, আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে কথা বলব।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সাথে পরামর্শক্রমে অবিলম্বে রাস্তা সংস্কার বিষয়ে ছয়টি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বেই নির্মাণকাজ তদারকির জন্য অতিরিক্ত প্রদান রকৌশলী সহ ১২ জন কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পদস্থ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত এ রাস্তায় চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হবে।”
রাজনৈতিক বিষয়ে কোন মন্তব্য করিনা:
”ফেরার পথে সমকালের সাংবাদিক উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট বিষয়ে আমার মন্তব্য জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়টি উত্থাপনকারী, প্রাক্তন উপদেষ্টা ও বর্তমান এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনা হিসাবে শ্রদ্ধার পাত্র। তাই তার বক্তব্যের ওপর আমার মন্তব্য করা শোভন নয়। তাছাড়া আমি রাজনৈতিক বিষয়ে কোন মন্তব্য করিনা।”
যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয় তা হবে গভীর দু:খের বিষয়:
”উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর থেকে আমার রোজনামচা এমনই। গতকালও রাত আটটায় বাসায় ফিরেছি। নিজে পদে থেকে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব কাউকে ব্যবসা বা চাকরি দিই নাই। নিজের সীমিত সামর্থের সবটুকু ব্যবহার করে জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছি। শিক্ষকতার সূত্রে, ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ গ্রহণ করিনি।
তাই, আজ ৭২+ বছর বয়সে আমাকে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয় তা হবে গভীর দু:খের বিষয়!!!”
