তথ্য উপদেষ্টা বললেন
আবরার ফাহাদ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বড় প্রেরণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:২৮, ৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০১:০৫, ৮ অক্টোবর ২০২৫
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, আবরার ফাহাদের শাহাদাত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তার আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি, বরং তা দেশের শিক্ষাঙ্গনে ভিন্নমতের প্রকাশের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রদর্শনীর আয়োজন করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
বিগত সরকারের ১৬ বছরের দুঃশাসনের সমালোচনা করে মাহফুজ আলম বলেন, “ওই সময় আবরার ফাহাদের মতো হাজারো শিক্ষার্থী নিপীড়নের শিকার হয়েছে। অনেকেই মৃতপ্রায় অবস্থায় বেঁচে গেছেন। প্রক্টর-প্রভোস্টদের নির্দেশে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হতো। কারাগারেও তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।”
তিনি বলেন, “আবরার ফাহাদের শাহাদতের গভীর তাৎপর্য আছে। আমরা তার আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিতে চাই। শেখ হাসিনা যে ভুল করেছেন, আমরা সেই ভুল করতে চাই না। ফ্যাসিজম যে প্রক্রিয়ায় জন্ম নেয়, আমরা সেই পথে যেতে চাই না।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভাজনকে ‘অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের বিভাজন নয়, ঐক্য দরকার। নাগরিকদের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা গড়তে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।”
নিজেকে “রাষ্ট্রগঠনের পক্ষের মানুষ” হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে জনগণের সামনে ভালো বিকল্প উপস্থাপন করতে হবে। তা না পারলে জনগণ পুরনো সংস্কৃতির দিকেই ফিরে যাবে। বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি ও বহু ঐতিহ্যের বাংলাদেশ গড়তে আমাদের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “২০১৯ সালে বুয়েটে ছাত্রলীগের গুণ্ডারা আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছিল। তারা ভেবেছিল, আধিপত্যবিরোধী কণ্ঠ হত্যা করে স্তব্ধ করা যাবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—এমন কণ্ঠ কখনো স্তব্ধ হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রত্যেক তরুণের হৃদয়ে আবরারের হৃৎস্পন্দন বেঁচে আছে। তার আত্মত্যাগ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক।”
‘জুলাইয়ের ন্যারেটিভ’ তৈরি করতে হবে
ফারুকী আরও বলেন, “গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো জুলাইয়ের ন্যারেটিভ তৈরি করা। পাশাপাশি, বিগত সরকারের ১৬ বছরের দুঃশাসনের ন্যারেটিভও তৈরি করতে হবে।’
'সাংস্কৃতিক বৈষম্যকে' ফ্যাসিবাদের অন্যতম মূল কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ধর্ম বা রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কাউকে আলাদা করা যাবে না। আমাদের এমন এক বাংলাদেশ গড়তে হবে, যে বাংলাদেশ ইতিহাসের সব অধ্যায়কে ধারণ করবে।”
উদ্বোধনী পর্বে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। উদ্বোধনের পর প্রদর্শিত হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র।
সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘চলচ্চিত্রে জুলাই’ শিরোনামে প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নেন প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র নির্মাতা, কলাকুশলী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
