স্ক্রিনে ডুবে থাকা শিশুদের মস্তিষ্কে পরিবর্তন উদ্বেগের
জীবনযাপন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩:৫১, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
বাড়ি সামলাতে, সন্তানের বায়না থামাতে বা খাওয়ানোর সময় অনেক বাবা–মা-ই হাতে ফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দেন। শিশু শান্ত থাকে, ব্যস্তও থাকে—এটাই মূল সুবিধা। কিন্তু এই ‘সহজ সমাধান’ যে দীর্ঘমেয়াদে সন্তানেরই ক্ষতি করছে, তা কি ভাবা যায়? নতুন গবেষণা বলছে, অভ্যাসের এই ছোট ভুলই শিশুর মনোযোগ, স্মৃতি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে বড় প্রভাব ফেলছে।
অতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম: শিশুর মস্তিষ্কে কী ঘটে?
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ফুকুই গবেষণা দল শিশুদের স্ক্রিন ব্যবহারের প্রভাব নিয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা প্রকাশ করেছে।
অ্যাডোলেসেন্ট ব্রেইন কগনিটিভি ডেভেলপমেন্ট (এবিসিডি) স্টাডির ভিত্তিতে করা এই গবেষণায় ১০ হাজারেরও বেশি শিশুর মস্তিষ্ক বিশ্লেষণ করা হয়—এদের বয়স ছিল ২ বছর থেকে ১০ বছর।
গবেষণায় দেখা গেছে—স্ক্রিনে ডুবে থাকা শিশুদের কর্টেক্স পাতলা হয়ে যাচ্ছে যা দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিক্রিয়া সামলানোর ক্ষমতা কমে যায়।
কর্টেক্স পাতলা মানেই—মনে রাখতে পারে না,খুব দ্রুত আবেগের বিস্ফোরণ,সিদ্ধান্ত নিতে দেরি,মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা।
গবেষকদের মতে, যেসব শিশু রোজ অনেকক্ষণ ফোন–ল্যাপটপ–টিভি দেখে—তাদের এমআরই রিপোর্টে এডিএইচডিরর মিল পাওয়া গেছে।
কর্টিকাল ভলিউম কমে যাচ্ছে - পরিকল্পনা করতে অসুবিধা হয়। গুছিয়ে কাজ করতে সমস্যা হয়। নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
এগুলো সরাসরি প্রমাণ নয়, তবে ভবিষ্যতের ঝুঁকির স্পষ্ট সতর্কবার্তা।
গবেষণায় স্ক্রিনটাইম বলতে ধরা হয়েছে—মোবাইলে গেম,স্মার্টফোন ব্যবহার,টিভি দেখা,ট্যাব বা কম্পিউটারে ভিডিও দেখা।
এগুলো মিলেই দিনে স্ক্রিনে ফ্রেম-ফ্রেম কাটানো সময় শিশুর মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতা বদলে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—২–৫ বছর বয়সে দিনে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা স্ক্রিন, খাওয়ার সময় স্ক্রিন নয়, রাতে ঘুমানোর আগে স্ক্রিন সম্পূর্ণ নিষেধ, ফোন নয়—খেলায়, গল্পে বা হোম টাস্কে মনোযোগ বাড়ান ওবাবা–মায়েরও স্ক্রিন ব্যবহারে উদাহরণ তৈরি করা জরুরি।
শিশুকে ব্যস্ত রাখতে ফোন হাতে তুলে দেওয়া সহজ সমাধান। কিন্তু সেই সহজ পন্থাই যদি তার মনোযোগ, আচরণ আর শেখার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়—তবে ক্ষতি যে অপূরণীয়।
