সাধারণ মানুষের রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতা
প্রকাশ: ১৫:৪৯, ২ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১০:২৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
আফসান চৌধুরী। গ্রাফিক্স : সমাজকাল
একাত্তর সালে আমাদের ইতিহাস যতটা মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা অন্য কোনো সময় হয়নি। এর কারণ হচ্ছে একাধিক সংগ্রামের ধারা আমাদের ইতিহাসে ছিল। সেই ধারাগুলো মূলত বিভিন্ন শ্রেণি, যারা অসুবিধা বা সুবিধার মধ্যে পড়ে আন্দোলন করেছেন তারা একদম চরম পর্যায়ে পৌঁছান একাত্তরে। তার মানে এটা একক শ্রেণির ইতিহাস নয়, এটা একক গাষ্ঠীর নয়, একক সংগঠনের নয়, একক জনগণেরও ইতিহাস নয়। কারও নয়, এখানে অনেকগুলো ইতিহাস একত্রিত হয়েছে এবং সেই একত্রিত ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায় আমরা দেখতে পাই। বিভিন্ন পরিবর্তন দেখতে পাই।
একাত্তরে যে সকল শরণার্থীরা বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে তাদের কিন্তু আমরা ভুলে গেছি। তাদের আমরা ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছি। তারা যে কতটা কষ্ট পেয়েছে, তা আমরা মনে রাখিনি। আমরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলি। আমরা যদি কাউকে কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম জিজ্ঞেস করি, তারা শুধু ঢাকার মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বলেন। ঢাকায় তেমন কোনো যুদ্ধ হয়নি, দুয়েকটি বড় অপারেশন ছাড়া। আসল যুদ্ধ হয়েছে গ্রামে। কিন্তু তা আমরা জানতে চাই না, খোঁজও করি না। তার কারণ হচ্ছে, আমরা ভয় পাই। কারণ তাহলে মধ্যবিত্ত হিসেবে আমদের অর্জনটা থাকে না। কারও কাছে যদি শাহবাগ আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাই, তাহলে যে কেউ বলে দিতে পারবে। যেমন ‘একাত্তরের দিনগুলো’ নামে যে বইটা আছে, সেখানেও এসব সম্পর্কে বলা আছে। তারা কেউ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলতে পারবেন না। আমি বলতে পারব। কারণ আমার কাছে এক হাজার জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা আছে। আমি সেখানে গিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি। তাদের সম্পর্কে কিছুই আমরা জানি না।
যেহেতু বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের রক্ত দিয়ে। তাদের পরিশ্রমে বাংলাদেশে মূল যুদ্ধ হয়েছে গ্রামে। রাজনীতিমুক্ত হয়ে দেশের জন্য যে যুদ্ধ। বাংলাদেশ গড়তে মূল ভূমিকা রেখেছে গ্রামের মধ্যবিত্ত মানুষ। কিন্তু তাদেরই ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। দরকার নেই তাদের ইতিহাসে থাকার। কারণ তারা ইতিহাসের সাক্ষী, তারা ইতিহাসকে নিজের চোখে দেখেছে। কিন্তু আমাদের শহরের মানুষ সেই অভিজ্ঞতার ইতিহাসটা দেখেনি। শহরের মানুষ এখনো কাঁদে, কিন্তু গ্রামের মানুষ কাঁদে না। কারণ তারা কিছু না কিছু করেছে।
লেখক: মুক্তিযুদ্ধ গবেষক
