কুমিল্লার বেতিয়ারায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমিল্লার বেতিয়ারায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান ও মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে । আজ ১১ নভেম্বর২০২৫ (মঙ্গলবার) সকাল ১০ টায় জগন্নাথ দিঘীর কুমিল্লা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে সংলগ্ন বেতিয়ারা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয় । 

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন । 

বেতিয়ারা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ও কমান্ডার গণ, কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং কুমিল্লা, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলা কমিটি, খেলাঘর আসর কেন্দ্রীয় কমিটি, নারায়ণগঞ্জসহ চট্টগ্রাম বিভাগীয় জেলাগুলো, বিজয়করা স্কুল এন্ড কলেজ, ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদ, কুমিল্লা ও ফেনী জেলা সংসদ, বেতিয়ারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি রক্ষা পরিষদ, মণি সিংহ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট, সমমনা নারায়ণগঞ্জ, বেতিয়ারা ইউনিয়ন বিএনপি, ন্যাপ, বেতিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটি সহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন । 

বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হোসেন জিবুর সভাপতিত্বে  এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন কবিরের সঞ্চালনায় এসময় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম । 

শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বেতিয়ারা তখনো ছিল এখনও আছে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত রকম ষড়যন্ত্র সৃষ্টি হবে বেতিয়ারা তত জেগে উঠবে । মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন শক্তির ঘাঁটি এদেশে হবে না । মুক্তিযুদ্ধ শুধু নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম নয়, মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম । 

মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণ করার জন্য সর্বোচ্চ সহায়তা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছিলাম, বৈষম্য দূর করার জন্য। বেতিয়ারা শহীদের স্বপ্ন ছিল সুন্দর ফুলের মতো একটি দেশ গড়ার, ইনসাফভিত্তিক সমাজ নির্মাণের । সেই স্বপ্ন লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এগোতে হবে । 

তিনি বর্তমান রাজনৈতিক প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাতীয় ঐক্য হয়েছিল একাত্তরে । এখন জাতীয় স্বার্থে জাতীয় ঐক্য করতে হলে মুক্তিযুদ্ধকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্য করতে হবে । বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যারা অবহেলিত বঞ্চিত তাদের ঐক্যবদ্ধ করে নয়া যুক্তফ্রন্ট করতে হবে । রংধনু কোয়ালিশন করতে হবে । রংধনু তে কালো রঙের স্থান হবে না । দেশকে বাঁচাতে হলে বিকল্পের বিকল্প নাই বলে মন্তব্য করেন তিনি । 

সংবিধানের চার মূলনীতি বাস্তবায়নের দাবিতে আবারো তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের যে প্রধান আকাঙ্ক্ষা- সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সোনার বাংলাদেশ, তা গড়ার সংগ্রামে এগিয়ে নিতে আমাদের আবার এগিয়ে আসতে হবে । মুক্তিযুদ্ধ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের লড়াই সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে । 

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনূস আলী, ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা, সাংগঠনিক সম্পাদক রথীন্দ্রনাথ বাপ্পী, যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, মণি সিংহ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টের মাহবুব হোসেন, খেলাঘর এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ, খেলাঘর নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম জহির, সমমনা সংগঠনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন দুলাল সাহা, সিপিবি নেতা অ্যাডভোকেট বিমল শীল, নোয়াখালী জেলা সিপিবির সভাপতি শহীদ ইসলাম বাবুল, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পরেশ কর, স্থানীয় বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোমিনুল হক চৌধুরী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল বারেক প্রমুখ । 

অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করে জগন্নাথ দিঘী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম । অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ কবি শামসুর রাহমানের কবিতা পাঠ করেন তার লেখা কবিতার সচিত্র মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের হাতে তুলে দেন । 

সমাবেশ থেকে কুমিল্লা অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা বাহিনীর ইতিহাস নিয়ে সংকলন প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন । 
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে, মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন । বেতিয়ারা শহীদের স্মরণে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের সংস্কার করার জন্য দাবি জানান।