ট্রাইব্যুনালে সেনা কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন নাকচ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:০৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০৩:১২, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
সেনা কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন নাকচ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাবের টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন নাকচ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই আদেশ দেয়।
মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অভিযোগপত্র পড়ে শোনান। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাবারক হোসেন গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন তোলেন। আদালত আবেদন গ্রহণ না করে তাদের সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়।
সকালে এ মামলায় গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে তাদের মধ্যে সাতজনের পক্ষে আইনজীবী ড. তাবারক হোসেন দুপুরে ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন শুনানিতে অংশ নেন।
শুনানির সময় ট্রাইব্যুনাল জানতে চায়, তিনি ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন নাকি আসামিদের অব্যাহতির আবেদন উপস্থাপন করবেন। আইনজীবী জানান, অব্যাহতির আবেদনের জন্য সময় চাইছেন, আপাতত ভার্চুয়াল হাজিরার বিষয়েই তিনি শুনানি করবেন।
শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল আবেদনকারীর কাছে জানতে চায়—কোন যুক্তিতে ভার্চুয়াল হাজিরা প্রয়োজন। উত্তরে অ্যাডভোকেট তাবারক বলেন, 'তারা সেনা কর্মকর্তা। তারা যেভাবে মিডিয়ার ট্রায়ালের শিকার হচ্ছেন এবং পরে খালাস পেলে কমান্ড রেজিমেন্টে ফিরে যাওয়ার সুযোগ হবে না। তাদের নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।'
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, 'এখানে আমরা কোনো সেনা কর্মকর্তার বিচার করছি না। তারা সেনাবাহিনীর হলেও ওই সময় র্যাবে কাজ করতেন, যা পুলিশের একটি বাহিনী। আমরা সেনাবাহিনী এবং দেশের সাধারণ মানুষ—সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রধান বিচারপতি এবং মন্ত্রীরা আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।'
এরপর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, 'ট্রাইব্যুনাল আইনে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই।' তখন অ্যাডভোকেট তাবারক হোসেন বলেন, তাদের আবেদন মঞ্জুর করা বা না করা ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার, আইনের বিষয় নয়।
এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ১৭ জন আসামি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার আছেন। তারা হলেন—র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, কর্নেল মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
পলাতকদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ এবং র্যাবের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম।
আসামিদের অব্যাহতির আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ১৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
