তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরবে কি না, জানা যাবে ২০ নভেম্বর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:১৬, ১১ নভেম্বর ২০২৫
ছবি : ফাইল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে করা আপিলের শুনানি শেষে আগামী ২০ নভেম্বর রায়ের জন্য দিন রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। এর আগে, ১৪ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ রায় দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত আপিল ও এ–সংক্রান্ত আবেদনের ওপর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন।
দশ দিনব্যাপী শুনানি শেষে এ রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়। শুনানিতে আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ড. শরীফ ভুঁইয়া, এহসান এ সিদ্দিক, শিশির মনির, এস. এম. শাহরিয়ার, এবং জয়নুল আবেদীনসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এরপর গত বছরের অক্টোবরে আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারপর ওই মাসে আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর আরেকটি আবেদন করেন। এ ছাড়া হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি নামের একটি সংগঠন রিভিউ আবেদন করে। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের অপর একটি সংগঠন এ মামলায় ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে আপিল শুনানির জন্য ২১ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আদালত। এ অনুসারে ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। দশম দিনে আজ শুনানি শেষে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করলেন।
আদালতে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কারিশমা জাহান। বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো. রুহুল কুদ্দুস শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
এ মামলায় আপিলে ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানি করেন। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক শুনানি করেন।
১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল সেই রায়।
রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এ আপিল মঞ্জুর করে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১৮ আগস্ট বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট আবেদন করেন। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৬টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার মোফাজ্জল হোসেন গত বছরের অক্টোবরে একটি রিট করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে রুল হয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল এবং পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের আরও চারটি ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
চলতি বছরের ৮ জুলাই ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি চলতি মাসে লিভ টু আপিল করেন। পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে লিভ টু আপিলটি (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়। এ ছাড়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে মোফাজ্জল হোসেনও একটি লিভ টু আপিল করেছেন। পৃথক লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায়।
এর আগে ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানির পর আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।
