সেই ১৫ সেনা কর্মকর্তার পক্ষে লড়বেন না ব্যারিস্টার সারওয়ার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৫০, ৯ নভেম্বর ২০২৫
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৫ সেনা কর্মকর্তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে লড়বেন না ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেন। ছবি: সংগৃহিত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তার পক্ষে আর লড়বেন না ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেন।
আজ রবিবার (৯ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১-এ নিজের নাম প্রত্যাহারের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে। আদালত কক্ষে বিষয়টি ঘোষণার পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘১৫ জন সেনা কর্মকর্তার পক্ষে আমরা পাঁচজন আইনজীবী ২২ অক্টোবর ওকালতনামা দাখিল করেছিলাম। পরে বুঝতে পারি, আমি নিজে আগে একটি অভিযোগ করেছিলাম—যে মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে এই মামলার আসামিরাও রয়েছেন।’
ব্যারিস্টার সারওয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘পেশাগত নৈতিকতা ও আচরণবিধি অনুযায়ী আমি ওই মামলায় ডিফেন্স আইনজীবী হতে পারি না। তাই আইসিটি আইনের বিধান ও নৈতিকতার ভিত্তিতে আবেদন করেছি, ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করেছে।’
ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, যেহেতু আইনজীবী নিজে আগে একই ঘটনায় অভিযোগকারী ছিলেন, তাই তার পক্ষে আসামিদের প্রতিনিধিত্ব করা ‘স্বার্থসংঘাত’ বা conflict of interest হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আদালত তাই আবেদনটি মঞ্জুর করে তাকে প্যানেল থেকে অব্যাহতি দেয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে দুটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে করা হয়েছে। অপরটি ২০২৫ সালের জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনসংক্রান্ত।
এই তিন মামলায় সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৩২ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে ঢাকা সেনানিবাসের সাব-জেলে আটক আছেন।
গুম-নির্যাতন মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে. এম. আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অব.), র্যাব গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
তারা বর্তমানে কারাগারে আছেন।
পলাতক আসামিরা কারা
এ মামলায় র্যাবের সাবেক তিন মহাপরিচালক—বেনজীর আহমেদ (পরবর্তীতে আইজিপি), এম খুরশিদ হোসেন ও মো. হারুন-অর-রশিদ পলাতক রয়েছেন। একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের তালিকায় আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।
অন্যদিকে, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত অপর মামলায় বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, পুলিশের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম ও সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রেদোয়ানুল ও রাফাত বর্তমানে সাব-জেলে আটক, আর বাকি দুজন পলাতক।
আইনি বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ ‘ন্যায়বিচারের স্বচ্ছতা’ বজায় রাখার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। পেশাগত নৈতিকতার কারণে একজন আইনজীবীর নিজের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ানো দেশের বিচারব্যবস্থায় পেশাদার নীতিমালা প্রতিষ্ঠার ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলাগুলো আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অভিযোগ-গঠন শুনানির পর্যায়ে প্রবেশ করবে বলে জানা গেছে।
