গুম মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:০৫, ৮ অক্টোবর ২০২৫
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের আগামী ২২ অক্টোবরের মধ্যে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
প্রসিকিউশন পক্ষের আবেদনের পর আদালত শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ সেনা ও র্যাবের সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম দুইটি গুম সংক্রান্ত মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করলে আদালত তা গ্রহণ করে পরোয়ানা জারি করেন।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানান, শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে—যেখানে পাঁচটি নির্দিষ্ট অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মামলাগুলোর অভিযোগে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী রাজনীতিক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের অপহরণ, গুম, গোপন নির্যাতনকেন্দ্রে আটক ও হত্যা করা হয়—যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য।
এই দুই মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ,র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, মো. হারুন-অর-রশিদ,র্যাবের একাধিক সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কে এম আজাদ, কামরুল হাসান, মাহাবুব আলম, আবদুল্লাহ আল মোমেন প্রমুখ।
এছাড়া ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আকবর হোসেন, সাইফুল আবেদিন, সাইফুল আলম, আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, হামিদুল হকসহ একাধিক কর্মকর্তা অভিযুক্ত হয়েছেন।
গত বছর ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তিনি ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকও বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
হাসিনার সরকারের সময় দেশজুড়ে গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশি–বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনা চলছিল। জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক সংস্থা এসব ঘটনাকে "রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের অংশ" হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশন বলছে, ২২ অক্টোবরের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে হাজির না করা হলে তাদের বিরুদ্ধে পলাতক অবস্থায় বিচার শুরু হতে পারে।
এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। গুম–নির্যাতনের দায়ে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।”
অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ বিচার প্রক্রিয়া কেবল অতীতের দমন–পীড়নের প্রতিকার নয়, ভবিষ্যতের জন্যও একটি ঐতিহাসিক নজির তৈরি করবে।
