উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে কেন বাংলাদেশ

টেকটোনিক প্লেটের তিনটি সক্রিয় ফল্টের মাঝখানে অবস্থান করায় বাংলাদেশ বর্তমানে অত্যন্ত উচ্চ ভূমিকম্পঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যথাসময়ে প্রস্তুতি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামোগত সক্ষমতা না বাড়ালে সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে মত দিয়েছেন দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ‘আর্থকুয়েক অ্যাওয়ারনেস, সেফটি প্রটোকল অ্যান্ড ইমার্জেন্সি প্রিপারেডনেস’ শীর্ষক সেমিনারে এ সতর্কতা দেন তারা। সেমিনারটি আয়োজন করে জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ভারত, মিয়ানমার ও ইউরেশীয়—এই তিন শক্তিশালী টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থান করায় বাংলাদেশ ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। সিলেটের ডাউকি ফল্ট, চট্টগ্রাম–টেকনাফ অঞ্চলের চিটাগং-আরাকান ফল্ট, মিয়ানমারের সাগাইং ফল্ট—এই তিনটি সক্রিয় ফল্ট দেশটিকে একটি ‘হাই-রিস্ক জোনে’ পরিণত করেছে।

দ্রুত নগরায়ণ, ঘনবসতি, বিল্ডিং কোড অবহেলা এবং সংকীর্ণ সড়ক পরিস্থিতি দুর্যোগ মোকাবিলাকে আরও কঠিন করে তুলছে বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন জাপানের দুই ভূমিকম্প–সহনশীল স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ কেসিরো সাকো ও হেসাইয়ে সুগিয়ামা।

তারা বলেন, ভূমিকম্প-পরবর্তী অভিজ্ঞতা থেকে শেখা শিক্ষা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো নকশা এবং বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে অনুসরণ করলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।

স্ট্রাকচারাল অডিট ও প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে বক্তারা বলেন,ভূমিকম্প-সহনশীল ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনের স্ট্রাকচারাল অডিট, কাজের মান কঠোর তদারকি, জরুরি উদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধি, কার্যকর আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম গড়ে তোলা এখনই সময়ের দাবি।

পাশাপাশি নাগরিকদের নিয়মিত ড্রিল, পরিবারভিত্তিক প্রস্তুতি ও সচেতনতা কর্মসূচি বাড়ানোর আহ্বানও জানানো হয়।

সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা জানান—গত ১০০ বছরে বাংলাদেশে ২০০টির বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে। ২০২৪ সালের পর থেকে কম্পনের হার আরও বেড়েছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬ সালের গবেষণায় বলা হয়, গঙ্গা–ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় থাকা ‘মেগাথার্স্ট’ ফল্ট থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।

সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাবডাকশন জোনে গত ৮০০–১০০০ বছর ধরে সঞ্চিত শক্তি এখনো মুক্ত হয়নি, যা বাংলাদেশকে ‘অতিজরুরি প্রস্তুতি’র পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।

জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি ঢাকা ও অন্যান্য এলাকায় অনুভূত একাধিক ভূমিকম্প আমাদের দুর্বলতা প্রকট করেছে। দ্রুত নগরায়ণ, দুর্বল ভবন কাঠামো ও জনঘনত্বের কারণে বড় কোনো কম্পনই ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

তিনি বলেন—রাষ্ট্র, আবাসন খাত ও জনগণ—এই তিন শক্তি একসঙ্গে কাজ করতে পারলেই ভূমিকম্পঝুঁকি মোকাবিলা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন—প্রকৌশলী প্রফেসর ড. এম শামীম জেড বসুনিয়া, ড. সৈয়দ ফখরুল আমিন (বুয়েট), রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদুজ্জামান, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল হোসেন চৌধুরী রিজভী, প্রফেসর ড. রাকিব আহসান (বুয়েট), বাজুস প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান, বিএমইডির পরিচালক মমিনুল ইসলাম, স্থপতি আরিফুল ইসলাম, রফিক আজম, এবং ভিস্তারার এমডি মুস্তফা খালিদ পলাশ।