কম পারিশ্রমিকেই থমকে গিয়েছিল ‘পরশপাথর’!
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:৪৯, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
বাংলা ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাসে ‘পরশপাথর’ নামটি একসময় ছিল প্রবল প্রতিধ্বনিত। নব্বইয়ের শেষ আর ২০০০-এর শুরুর দিকে এই ব্যান্ডের গান দাপটের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলা তরুণ সমাজের প্লেলিস্টে। কিন্তু জনপ্রিয়তার শিখরেও দীর্ঘদিন টিকতে পারেনি দলটি। নানা টানাপোড়েন, আর্থিক সীমাবদ্ধতা আর শিল্পীদের পেশাগত ব্যস্ততার কারণে ব্যান্ডের পথচলা থেমে যায়।
২০ বছর পর আবারও সেই দল একজোট। প্রশ্ন—কী ভরসায় ফিরে এলেন তাঁরা? বাংলা ব্যান্ড কি সত্যিই আবার টিকে থাকার মতো জায়গা পাচ্ছে?
‘পরশপাথর’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজকালকে জানান, জনপ্রিয়তা যত বাড়ছিল, ততই বাড়ছিল চাপ।
তিনি বলেন, “খ্যাতির বিড়ম্বনাই আমাদের ভেঙে দিয়েছিল। অনুষ্ঠান ছিল, অ্যালবাম চলত, লোকজন শুনত—কিন্তু টাকার অঙ্ক ছিল হাস্যকর। সংসার চালানোই কঠিন হয়ে দাঁড়াত।”
কলকাতা থেকে অনেকেই বড় কাজের খোঁজে মুম্বাইমুখী হন। ফলে ব্যান্ডের নিয়মিত চর্চা ও একসঙ্গে থাকার সুযোগ ক্রমেই কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সদস্যরা আলাদা পথে হাঁটতে বাধ্য হন।
অয়ন জানান, একসময় বাংলা ব্যান্ডের অনুষ্ঠান থাকলেও পারিশ্রমিক ছিল অত্যন্ত কম।
তিনি বলেন, “ভূমি পারিশ্রমিক ৬৫ হাজার করলে আমরা পেতাম ৩৫–৪০ হাজার। এর মধ্যেই সাউন্ড নিতে হত নিজেদের খরচে। বড় অঙ্ক বললে কেউ নিতে চাইত না। এক লক্ষের পারিশ্রমিকের সীমা পেরোতে তখন বাংলা ব্যান্ডের বহু বছর লেগে গিয়েছিল।”
ফলে শুধুই জনপ্রিয়তা দিয়ে ব্যান্ড ধরে রাখা সম্ভব ছিল না। আর্থিক টানাপোড়েনই শেষ পর্যন্ত ‘পরশপাথর’-এর যাত্রা থামিয়ে দেয়।
দুই দশকের ব্যবধানে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের বাজারে এসেছে বদল।
— ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গান থেকে আয়
— অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের রয়্যালটি
— লাইভ শো-র পারিশ্রমিক বৃদ্ধি
— কর্পোরেট শো-র সংখ্যা বেড়ে যাওয়া
এসবই ব্যান্ডকে ফের ভরসা দিয়েছে।
অয়নের বলেন, “এখন উপার্জনের দিকটা আগের তুলনায় ভালো। মানুষ বাংলায় নতুন গানও শুনছে। ব্যান্ড নিয়ে পরে থাকার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলেই আবার একজোট হওয়ার সিদ্ধান্ত।”
ইন্টারনেটে রিলের যুগ, হিন্দি-দক্ষিণী গানের প্রবল দাপট—এর মধ্যেই আবার নিজেদের জায়গা খুঁজে নিতে চাইছে ‘পরশপাথর’।
তাদের বিশ্বাস, সোশ্যাল মিডিয়াই এখন সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। সঠিক পরিকল্পনা, নিয়মিত কনটেন্ট আর স্টেজ শো-র মাধ্যমে আবারও বাংলা ব্যান্ডশিল্পীরা শ্রোতাদের পছন্দের রেখায় ফিরতে পারবেন।
২০ বছর আগে যে দলটি তরুণদের হৃদয় জয় করেছিল, তারা নতুন সময়ে নতুন রূপে ফিরছে। বাজার বদলেছে, শ্রোতার স্বাদও বদলেছে। তবে বাংলা গানের নিজস্ব শক্তির ওপর ভরসা করেই ‘পরশপাথর’ আবারও পথচলা শুরু করেছে—আর এটিই বাংলা ব্যান্ড জগতের জন্য ইতিবাচক সংকেত।
