আজ নোয়াখালী মুক্ত দিবস
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:১০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্ত হওয়ার স্বাক্ষর বহন করে পিটিআই গেইটের `মুক্ত স্কয়ার’ সৌধটি। ছবি: সংগৃহীত
আজ ৭ ডিসেম্বর। নোয়াখালী মুক্ত দিবস। মুক্তিসেনারা ১৯৭১ সালের এই দিনেই জেলা শহরের পিটিআইতে রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর মাটিতে উড়িয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা।
২৫ মার্চের পর মুক্তিযোদ্ধারা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নোয়াখালীকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর বহু বাঁধা পেরিয়ে বহুকষ্টে হানাদার বাহিনী ২২ এপ্রিল নোয়াখালী দখল করে নেয়। দখলদার বাহিনী জেলা শহরের শ্রীপুর, সদরের রামহরি তালুক, গুপ্তাংক, বেগমগঞ্জের কুরিপাড়া পোড়াবাড়ি, গোপালপুর ও আমিশাপাড়ায় নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এ সময় হানাদাররা পুড়িয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ-শিশুকে। জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান।
এরপর দেশের অভ্যন্তরে ও ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার অস্ত্র হাতে মাঠে নামে মুক্তিযোদ্ধারা। কোম্পানিগঞ্জের বামনী, তালমাহমুদের হাট, ১২ নং স্লুইস গেইট, সদরের ওদারহাট, করমবক্স, বেগমগঞ্জের ফেনাকাটা পুল, রাজগঞ্জ, বগাদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা।
নোয়াখালীকে হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি যখন প্রায় চূড়ান্ত, ঠিক তখনই ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে মাইজদী পিটিআই ও বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুল ক্যাম্প ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যেতে থাকে হানাদারবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় বেগমগঞ্জ-লাকসাম সড়কের বগাদিয়া ব্রিজ অতিক্রম করতেই সুবেদার লুৎফুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন মুক্তি বাহিনীর হামলায় হানাদারবাহিনীর অসংখ্য সদস্য নিহত হয়।

পরদিন ৭ ডিসেম্বর ভোররাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীকে শত্রুমুক্ত করার চূড়ান্ত অপারেশন শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে চতুর্দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা সংলগ্ন টেকনিক্যাল হাইস্কুলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পটি মুক্ত করেন।
একই দিন জেলা শহরের মাইজদি কোর্ট স্টেশন, জিলা স্কুল, দত্তেরহাট নাহার মঞ্জিল মুক্ত করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারপর হানাদারবাহিনী ও রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটি মাইজদি পিটিআই ভোর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চতুর্দিক ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান টের পেয়ে পিটিআই ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থানরত রাজাকাররা এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে পাশের সরকারি আবাসিক এলাকার এক ব্যক্তি মারা যান। পাল্টা গুলি চালায় মুক্তিযোদ্ধারাও। গুলির শব্দে কেঁপে উঠে পুরো শহর।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে অন্ধকার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে থাকে রাজাকাররা। বিপরীত দিক থেকে গুলি বন্ধ হলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে দেখতে পান সেখানে ১০-১২ জন রাজাকারের লাশ পড়ে আছে। এছাড়া আরও কয়েকজন রাজাকার ধরা পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। এভাবে অবশেষে ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় নোয়াখালী জেলা।
